নামের সঙ্গে বাস্তবে কোনো মিল পাওয়া যায় না। তাই সরেজমিন গেলে দেখা মেলে এটা তো বিল নয়, স্বচ্ছ গভীর জলরাশির মিঠা পানির হ্রদ।
কাট্টলী বিলটি শুধু মাছের অভয়ারণ্য নয়। বর্তমানে বিলটি পরিযায়ী পাখিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সারাবছর কোনো না কোনো পাখির বিচরণ থাকে বিলটিতে।
পাখিগুলো শীত প্রধান দেশ থেকে হাজার-হাজার মাইল পারি দিয়ে পাহাড়ি রাঙামাটির লংগদু উপজেলার কাট্টলী বিলে আসে। শীতের ভরা মৌসুমে এসব পাখি এ বিলে আশ্রয় নেয়।
কেননা পাহাড়ি এই এলাকায় শীতের তীব্রতা তেমন একটা থাকে না। তাই পাখিগুলো উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে এবং খাবারের সন্ধানে এই এলাকায় এসে ভীড় করে। শীত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাখিগুলো আবার নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যায়। কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণ করা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু থাকে কাট্টলী বিলটি দেখা। এখানে ভ্রমণ করার সময় দেখা মিলবে জেলেরা নানা রকম জাল দিয়ে মাছ ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠিক অন্যদিকে পরিযায়ী পাখিরা তাদের ভুড়ি ভোজন সারতে মাছ শিকারে মহা ব্যস্ত।
হাজার-হাজার পরিযায়ী পাখি ঝাঁকে-ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে। স্বচ্ছ জলধারায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব পাখিদের কলকাকলিতে ভ্রমণ পিপাসু যেকোনো মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে তোলে।
এই এলাকায় যেসব বিদেশি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বৈধর হাঁস, রাজ বৈধর, কোরালী, সাদা ঝুঁটি, পানকৌড়ি, কালোঝুঁটি পানকৌড়ি উল্লেখযোগ্য।
এখানে যেসব দেশীয় প্রজাতির পাখির দেখা মেলে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সাদা বক, গাংচিল, শামুকখোল বকসহ প্রভৃতি। এর মধ্যে বিদেশি জাতের কালোঝুঁটি পানকৌড়ি সারাবছর এ এলাকায় বাস করে। এক সময় এ বিলে হাজার-হাজার পরিযায়ী পাখির মিলন মেলা ঘটলেও বর্তমানে এর সংখ্যা দিন-দিন হ্রাস পাচ্ছে। হ্রদ এলাকায় জেলেদের আনা-গোনা, সাধারণ যাত্রীবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং স্টিমার চলাচলে পাখিদের বিচরণ ভূমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিনদিন।
এছাড়া ওই এলাকায় অসাধু একটি চক্র তৈরি হয়েছে যারা বিল থেকে পরিযায়ী পাখি শিকার করে বাজারে চড়াদামে বিক্রি করে। এই অসাধু পাখি শিকারীদের কারণে বর্তমানে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় পাখিপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের দাবি- এ বিলে সাধারণ যাত্রীবাহী নৌকা চলাচল ও জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করা। অবৈধ পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে বিলটি তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।
লংগদু উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও পাখিপ্রেমী আবু মুছা বাংলানিউজকে বলেন, দুর্গম এলাকার মধ্যে কাট্টলী বিলকে প্রাকৃতিক সম্পদের লীলা ভূমি বলা চলে। এ বিলে যেমন মাছের অভয়ারণ্য রয়েছে তেমনি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রজাতির পাখিও রয়েছে।
এ বিলে এক সময় হাজার-হাজার দেশি-বিদেশি পাখির বিচরণ থাকলেও দিনে দিনে এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
সাধারণ যাত্রীবাহী নৌকা, স্টিমার চলাচল, জেলেদের আনাগোনা বন্ধ এবং অবৈধ পাখি শিকারীদের রোধ করা গেলে এ বিলটি হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কাট্টলী বিলকে রক্ষা করা অপরিহার্য। এজন্য তিনি স্থানীয় সচেতন মহল এবং প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৯
আরএ