এদের বেশিরভাগই বর্তমানে আছেন কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ট্রানজিট ক্যাম্পে। কিছু কিছু আছে ক্যাম্পে আত্মীয়-স্বজনের কাছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আবসার ভারত থেকে রোহিঙ্গা অসার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে বলেন, আমরা শুনেছি ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জোর করে মিয়ানমারে পাঠানো হচ্ছে। সেই ভয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে কী করা যায়, আমরা তা নিয়ে চিন্তা করছি।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুনেছি প্রায় ৩০০টি পরিবারের এক হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা ভয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। এদের বেশিরভাগকেই উখিয়ার বালুখালীর ইউএনএইচসিআরের ট্রানজিট ক্যাম্পে আপাতত রাখা হয়েছে। কিছু কিছু হয়তো এখনও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ক্যাম্পে আছে। তবে সবাইকে ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এখন তাদের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পেলে অন্যত্র সরানো হবে।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে ভারত থেকে জোর করে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর এ থেকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ভয়ে রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশে চলে আসা শুরু করেছেন। আমরা এ রকম শুনেছি। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার চাপে আমাদের হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে আবার ভারত থেকে রোহিঙ্গারা আসছেন, এটি আমাদের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়- জানান তিনি।
মিয়ানমারে গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসাসহ বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
বর্তমানে এসব রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘভুক্ত ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার সহযোগিতায় খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ সরকার সব ধরনের মানবিক সেবা দিয়ে আসলেও এতো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এখন আবার ভারত থেকে রোহিঙ্গা আসা শুরু হলো।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা এ রকম ৪৮ জন রোহিঙ্গাকে কুমিল্লা জেলা পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। গত ৩ জানুয়ারি এদের কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে উখিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে এদের ঘুমধুম বালুখালী ইউএনএইচসিআর-এর ট্রানজিট ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। এদের মধ্যে ১০ জন নারী, ১১ জন পুরুষ এবং ২৭ জন শিশু রয়েছেন।
তিনি বলেন, এসব ছাড়াও আরও অনেক রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশে চলে এসেছেন বলে আমরা শুনেছি। তবে সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি ভারতের জম্মু শহর থেকে পালিয়ে এসে টেকনাফের শাপলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরে তার মামা আইয়ুব আলীর ঘরে আশ্রয় নেন আজিজ উল্লাহ (২৬)। আজিজ মিয়ানমারের মংডু জেলার হাসসুরাত গ্রামের আজিম উল্লাহর ছেলে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভারতে লোহা তৈরির কারখানায় দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতো আমার। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। তবে যতোদিন সেখানে ছিলাম, খুব আতঙ্কে কেটেছে, কখন মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি তো খুব খারাপ, তাই এখানে চলে আসি।
আজিজ বলেন, স্ত্রীসহ তিন সন্তানকে ভারতে নিজের বাবা-মায়ের কাছে রেখে আমি প্রথমে বাংলাদেশে চলে এসেছি। তারাও আসার চেষ্টা করছে।
আজিজ আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে তিন দিনে কলকাতা পৌঁছেছি। তারপর এক রাতে ছোট একটি খাল পাড়ি দিয়ে সাতক্ষীরায় সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। পরে সেখান থেকে শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরে এসে মামার ঘরে আশ্রয় নিই।
শুধু আজিজই নন, অভাব এবং স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ভয়ে কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ চলে আসছেন রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এর হেডমাঝি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, ভারতে না-কী থাকা-খাওয়ার খুব সমস্যা। দিনমজুরি বা অন্যান্য কাজ করে যা পাওয়া যায়, তা দিয়ে সংসার চলে না। তাছাড়া ওখান থেকে জোর করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে আসছেন।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে ভারত থেকে পালিয়ে আসা বেশকিছু রোহিঙ্গা কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের শাপলাপুরসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে এবং আত্মীয়-স্বজনের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে এদের ঘুমধুম ইউএনএইচসিআর-এর ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৯
এসবি/টিএ