আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি গত ১৪ জানুয়ারি স্ত্রীর জরায়ুর সমস্যা নিয়ে ডাক্তার মুক্তাদির রহমানের কাছে তার পলি ক্লিনিকে পরামর্শ নিতে আসেন। তখন রাজ্জাককে ডাক্তার মুক্তাদির জানান, তিনি গাইনি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন দিয়ে পরদিন অস্ত্রোপচার করিয়ে রোগী সুস্থ করে দেবেন।
রাজ্জাকের ভাষ্য অনুযায়ী, ওটি থেকে বেরিয়ে ডা. মুক্তাদির বলেন ‘রোগীর অবস্থা ভালো নয়। দ্রুত ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়ে যান’। এরপর তিনি ক্লিনিক ছেড়ে চলে যান। বাধ্য হয়ে রাজ্জাক তার স্ত্রীকে ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা তনুকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে স্ত্রীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন রাজ্জাক। এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তনু।
স্ত্রী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন জানিয়ে এই অবস্থার জন্য দোষী ডাক্তারের বিচার দাবি করেন আব্দুর রাজ্জাক।
মাগুরা শহরের খান পাড়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের জেলা যুগ্ম-সম্পাদক সেলিম খান অভিযোগ করেন, ‘সম্প্রতি ডা. মুক্তাদির মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে অবসরে গিয়েছেন। তবে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েও তিনি মাগুরা শহরে ক্লিনিক ব্যবসা করে আসছেন। মাগুরা শহরের পলি ক্লিনিকের মালিক মুক্তাদির রহমানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, নিজে ও দালালদের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে তার ক্লিনিকে এনে অপারেশন করে চলেছেন। সার্জন না হয়েও সাধারণ মেডিকেল অফিসার হিসেবে অপারেশন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত তার হাতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। কেবল তাই নয়, সদর হাসপাতালে আরএমও’র দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সার্টিফিকেট বাণিজ্যর অভিযোগও রয়েছে। ’
সেলিম খান আরও বলেন, ‘এক সময়ের ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ডা. মুক্তাদিরের বাবা-চাচা রাজাকার ছিলেন। তার এক বড় ভাই একাত্তর সালে রাজাকার বাহিনীর খুনি ছিলেন। স্কুল জীবনেই ডা. মুক্তাদির ওই বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সংখ্যালঘু বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছেন। তার নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার বিচার চেয়েছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। বরং দিনে-দিনে ডাক্তার মুক্তাদির আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ’
তনুকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে ডাক্তার মুক্তাদির এক সংবাদকর্মীকে বলেন, ‘দেশে সাংবাদিক হিসেবে যারা লেখালেখি করতিছে তাদের কোনো কমন সেন্সই নেই। লেহাপড়া শিখে সাংবাদিক হইছেন নাকি মাঠে ঘাটতে আসে সাংবাদিকতা করতিছেন। কোনো কিছু শুনলেই মনে করে মওকা পায়ে গিছি, এবার রাষ্ট্র স্বাধীন করে ফেলবো। সংবাদপত্র দেখলে স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি সাহেব খুবই অবজ্ঞা করেন। উনি বলেন, সংবাদপত্রের কোনো নিউজই সঠিক নয়। সাংবাদিকদের সম্পর্কে ডিজি সাহেবের ধারণা খুবই খারাপ। ডিজি সাহেবের সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হয়। উনি বলেন, সাংবাদিকদের কোনো কথা শুনবেন না। আপনার দায়িত্ব আপনি পালন করেন। ’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার মুক্তাদির বাংলানিউজকে জানিয়ে দেন, ‘সাংবাদিকদের সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন তা সবই সত্যি। সাংবাদিকরা ভালো নয়, এটাই সত্যি। সাংবাদিকরা ভালো হলে সরকার কি ডিজিটাল আইন করতো? সাংবাদিকদের শায়েস্তা করতেই সরকার এই আইন করেছে। সরকারেরইতো সাংবাদিকদের ওপর আস্থা নেই। নিউজ করে যা পারেন করেন-গে। ’
সার্জন না হয়েও শুধু মেডিকেল অফিসার হয়ে কেন অপারেশন করেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অহংকার করে বলছি, আমার মত সার্জন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজেও একজন নেই। ’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ছাদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাগুরা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। তবে কোনো চিকিৎসক যদি সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচারণ করেন সেটা দুঃখজনক। আর ডিজি স্যারের নাম ব্যবহার করে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটি উর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯
এইচএ/