তারা বলছে, নতুন প্রকল্পে বাংলাদেশটি মুদ্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থায়ন যেমন ইতিবাচক, তেমনি সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলে ঝুঁকিও আছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১৩ থেকে ২০১৮ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত পাঁচ বছরে পাইপলাইনে অর্থায়নের পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইআরডি জানিয়েছে, হেলদি বা বড় পাইপলাইন প্রকল্প দরকার। ভবিষ্যৎ উন্নয়নে পাইপলাইনে ঋণ থাকা ভালো। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে পাইপলাইনের টাকা খরচ করা যাবে। কমিটমেন্ট বাড়লে পাইপলাইন বড় হবে এটাই স্বাভাবিক। পাইপলাইনে থাকা অর্থায়নের ওপর ভরসা রেখেই বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগে নিরাপদ পথ দেখাবে বড় পাইপলাইন।
বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু বিদেশি ঋণের পরিমাণ এখন ১৭ হাজার টাকা। ২০১৮ অর্থবছরের শেষ নাগাদ দেশে বিদেশি ঋণের স্থিতি তিন হাজার ৩৫২ কোটি ডলার। তাছাড়া পাইপলাইনের এ অর্থায়ন যতো বেশি ছাড় হবে, ততো ঋণের বোঝা বাড়বে।
একক দেশ হিসেবে এখন পর্যন্ত জাপান বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে। প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় দুই বিলিয়ন ঋণ দিয়েছে চীন। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া। ১ দশমিক ২ বিলিয়ন দিয়েছে দেশটি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশেকে ঋণ দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, কুয়েত, সৌদি আরব, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সংস্থা হিসেবে বেশি ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপরেই রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রায় নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার তাদের দেওয়া ঋণ।
পাইপলাইন প্রসঙ্গে ইআরডির যুগ্ম সচিব রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাইপলাইনে আছে। এটা মেগা প্রকল্পের জন্য ভালো। ভবিষ্যতে বড় বড় উদ্যোগ নিতেও একটা হেলদি পাইপলাইন দরকার আছে। কমিটমেন্ট না থাকলে পাইপলাইনও থাকবে না। এক্ষেত্রে যদি পাইপলাইন শূন্য হয়ে পড়ে, তবে পরবর্তীতে বড় প্রকল্প হাতে নিতে পারবো না।
বৈদেশিক ঋণ প্রসঙ্গে রুহুল আমিন বলেন, জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি ঋণকে উদ্বেগজনক বলা হয় না। এর বেশি হলে তখন উদ্বেগজনক বলে ধরা হয়। বর্তমানে আমাদের বিদেশি ঋণের যে স্থিতি রয়েছে, তা ২০৫৭ সালেই পরিশোধ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এখন বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেশি। শতকরা ৯৫ শতাংশই ঋণ নিচ্ছি। যেখানে অনুদান মাত্র পাঁচ শতাংশ। অথচ এর আগে আমরা ৯০ শতাংশই অনুদান পেতাম। বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে। ফলে অনেক দেশ আমাদের ঋণ দিতে প্রস্তুত।
ইআরডি সূত্র বলছে, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। এটাকে স্বস্তিদায়ক অবস্থানে নিতে হবে। ঋণের টাকা নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বক্ষমতা দেখাতে হবে। এছাড়া সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি যেনো ব্যয় না বাড়ে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সচ্ছতার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের আরও দক্ষও হতে হবে।
আরও জানা যায়, ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা সামনে এসেছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে অন্যতম গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ)। জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ক্লাইমেট রেসিলেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার মেইনস্ট্রিমিং ইন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। জিসিএফ ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক দরবারে বাংলাদেশকে আরও সোচ্চার হয়ে নিজের দাবি তুলে ধরতে হবে। কারণ জলবায়ুগত কারণে বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জিসিএফ অর্থায়ন বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ।
তবে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। যেমন প্রকল্পের বার বার সময়-ব্যয় বৃদ্ধি, অনুদান কমে যাওয়া। যথা সময়ে প্রকল্পের সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে সংশ্লিষ্টরা। অথচ ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে। ঋণ নেওয়ার পর থেকেই বাড়তে থাকে সুদ।
ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঋণের টাকায় আমরা অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকি। যথা সময়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়াটা একটা বড় সমস্যা। এর ফলে সময়-ব্যয় বাড়ে। ঋণের টাকায় নেওয়া প্রকল্প দ্রুত সময়ে যাতে বাস্তবায়িত হয়, সে বিষয়ে উচ্চ মহলকে অবহিত করবো। তাছাড়া এই টাকায় নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব সহ্য করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক দেশ আছে ঋণ দিতে চায়। অথচ ডাটা দিতে চায় না। ঋণের বিষয়ে দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে। এসব বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিতে চাই। ঋণের টাকা কীভাবে ব্যবহার করবো, সে বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করার উদ্যোগ নেবো। সব বিষয়ে আমরা সচ্ছতা আনার কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
এমআইএস/টিএ