ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চরের বুকে এখন নৌকা মেরামতের ব্যস্ততা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
চরের বুকে এখন নৌকা মেরামতের ব্যস্ততা নৌকা মেরামতে ব্যস্ত মাঝি-মাল্লারা। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বিশাল জলরাশি ভরা যমুনায় জেগেছে অসংখ্য চর। চরের জমিতে এখন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত চরাঞ্চলের মানুষগুলো। কারণ প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। আহার সংগ্রহ করতে হয়। প্রয়োজনে প্রায়ই পাড়ি দিতে হয় যমুনার বিশাল জলরাশি। যেখানে পারাপারের মাধ্যম নৌকা। মাছ ধরার কাজেও ব্যবহৃত হয় এই বাহনটি। সবমিলে যমুনাপাড়ের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম এই নৌকা। 

জেগে ওঠা চরের বুকে নৌকা মেরামতে ব্যস্ত মাঝি-মাল্লারা। সঙ্গে রয়েছেন একাধিক দক্ষ কারিগর।

কেউ তৈরি করছেন লগি-বৈঠা। কেউ আবার পুরানো নৌকার বিভিন্ন অংশ সংস্কারে মত্ত। নৌকার ছাউনি বা ছই তৈরিতে ব্যস্ত কেউ কেউ। সারাক্ষণ চলছে ঠক ঠক শব্দ। আবার গুণ গুণ করে গানও গাইছেন তাদের কেউ কেউ। নৌকা মেরামতে ব্যস্ত মাঝি-মাল্লারা।  ছবি: আরিফ জাহানযমুনা বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা। এরমধ্যে সারিয়াকান্দির সিংহভাগ ও ধুনটের একটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বহমান যমুনা। তবে হিংস্র যমুনা এখন চরম শান্ত। তার বিশাল জলধারা এখন অনেকটাই ফাঁকা। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে অসংখ্য বালুচর।

আর যমুনার এই বিশাল জলধার পাড়ি দেওয়া মাধ্যম নৌকা। পাল তুলে সঙ্গে দড়ি বেঁধে মাঝি-মাল্লারা নৌকা বেয়ে নিয়ে যেতে নদীর কূল ঘেঁষে। এটা অবশ্য অনেক আগের কথা। বর্তমানের চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন। এখন সেই জায়গায় স্থান করে নিয়েছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। তবে আগের নৌকাও এখনো চলে যমুনায়। কম আর বেশি তবে সারাবছরই যমুনায় চলে নৌকা।

সেই নৌকা মেরামতের এখনই উপযুক্ত সময়। নতুন করেও অনেকে তৈরি করছেন যমুনায় চলাচলের এই বাহনটি। কেননা এখন যমুনা শুকিয়ে গেছে। প্রকৃতিতে নেই ঝড় বা বৃষ্টি। ঠাণ্ডা বিরাজ করলেও প্রকৃতি এখন পুরোপুরি শান্ত। আর সেই সুযোগে যমুনায় চলাচলের বাহন মেরামত বা নতুন করে তৈরীর কাজে ব্যস্ত মাঝি-মাল্লা ও নৌকা বানানোর কারিগররা।

আব্দুল বারেক তাদেরই একজন। বহুকাল ধরে নৌকা মেরামত ও নতুন নৌকা তৈরির কাজ করে থাকেন।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান, আগে তো ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছিলো না। লগি-বৈঠা দিয়ে নৌকা চালাতো মাঝি-মাল্লারা। কালের আবর্তে এসব নৌকার জায়গার স্থান করে নিয়েছে ইঞ্জিনচালিতা নৌকা। তবে লগি-বৈঠার নৌকার কদর একেবারে ফুরিয়ে যায়নি যোগ করেন আব্দুল বারেক। নৌকা মেরামতে ব্যস্ত মাঝি-মাল্লারা।  ছবি: আরিফ জাহাননৌকা তৈরির আরেক কারিগর আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছরের এ সময়ে পুরানো নৌকা মেরামত বা সংস্কার আর নতুন নৌকা তৈরির হিড়িক পড়ে যায় যমুনা বেষ্টিত এলাকায়। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। নিয়মিত পুরানো নৌকা মেরামত বা সংস্কারের কাজ করছেন তারা। আবার অনেকেই নতুন নৌকা বানিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, ভাল মানের একটি নতুন নৌকা তৈরিতে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়। তবে বর্তমানে নতুন নৌকা তৈরির চেয়ে পুরানো নৌকা মেরামতের কাজই বেশি। আর মেরামতের এই কাজটি করতে তারা প্রতিদিন ৬শ’ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন।

নৌকার মালিক ইয়াছিন আলী বাংলানিউজকে জানান, যুগের অনেক পরিবর্তন হলেও যমুনা পারাপারে এখনও নৌকার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া মাছ ধরার কাজেও নৌকা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অবশ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ইঞ্জিনচালিত নৌকার ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তবে লগি-বৈঠাওয়ালা নৌকার ব্যবহার একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। অনেক মানুষ এখনও এ ধরনের নৌকা চলাচল করতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন।

হযরত আলী নামে আরেক নৌকার মালিক বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে যমুনা তাদের গ্রাস করেই চলছে। কিন্তু মাথা গোঁজার অন্য কোনো ঠাঁই না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও যমুনা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে নৌকার মাধ্যমেই দীর্ঘকাল ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তাই উপযুক্ত সময়ে তার পুরানো নৌকাটি ঠিকঠাক করে নিচ্ছেন নৌকার এই মালিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।