২০১৪ সালে ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা সংগঠনের সদস্যদের মনোবল বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। বিষয়টি বিবেচনায় এনে যেহেতু হলি আর্টিজান মামলায় আদালতে শুনানি চলছে, সেই সুযোগে আবারো জঙ্গি সদস্যদের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিল রিপন।
শনিবার (১৯ জানুয়ারি) দিনগত রাতে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ওরফে রেজাউল ওরফে রেজাউল করিম ওরফে আবু মুজাহিরকে আটক করেছে র্যাব।
মামুনুর রশিদ হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি এবং অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী। এসময় তার কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি জানান, বগুড়ার বাসিন্দা রিপন ঢাকার মিরপুর, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও নওগাঁর বিভিন্ন মাদরাসায় পড়াশোনা করে। সবশেষ ২০০৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদরাসাতুল দারুল হাদিস থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে। এরপর সে বগুড়ার সাইবার টেক নামে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কোর্স সম্পন্ন করে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়।
২০১৩ সালে পূর্বপরিচিত ডা. নজরুলের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং ধীরে ধীরে সে জেএমবির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে রিপনের দায়িত্ব ছিল ইয়ানত (চাঁদা) সংগ্রহ করে ডা. নজরুলের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ডা. নজরুল সে সময়ে জেএমবির একাংশের আমির ছিলেন।
পরবর্তী সময়ে জেএমবির সারোয়ার জাহান গ্রুপের জন্য নতুন করে অর্থ ও সদস্য সংগ্রহ করার কাজ হাতে নেয় রিপন। এরই অংশ হিসেবে রিপন বিকাশের দোকান লুটসহ ছিনতাই করা ৮ লাখ টাকা সারোয়ার জাহানকে দেয় সে।
২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে তামীম চৌধুরী ও সারোয়ার জাহানের গোপন বৈঠকে উভয়ের মধ্যে সমোঝতা স্বাক্ষর হয়। এ বৈঠকে রিপন জেএমবির সুরা সদস্য হিসেবে নিয়োজিত হয়। তার দায়িত্ব ছিল অর্থ সংগ্রহ, সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরণ সরবরাহ করা।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধাতে এক বৈঠকে হলি আর্টিজানে হামলার সিদ্ধান্ত হয়। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হামলার আগে এপ্রিল মাসে রিপন পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যায়। সেখান থেকে হামলার আগে রিপন আনুমানিক ৩৯ লাখ টাকা সারোয়ার জাহানকে পাঠায়। হলি আর্টিজানে ব্যবহৃত তিনটি একে ২২ রাইফেল, পিস্তলসহ বিস্ফোরকগুলো কল্যাণপুরে পাঠায়। মারজানের মাধ্যমে এরপর সেগুলো সারোয়ার জাহানের কাছে পৌঁছায়।
এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলাতার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রিপন ছিলেন এবং সেসব ঘটনা রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল।
মুফতি মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন জঙ্গি হামলাগুলো পরিচালনার আগে মহড়া করে অনুশীলন করতো। এ ধরনের একটি অনুশীলন মহড়া চলাকালীন সময়ে ২০১৬ সালের এপ্রিলে বগুড়ায় বিস্ফোরণে সুরা সদস্য ফারদিন ও অপর এক সক্রিয় জঙ্গি সদস্য তারিকুল ইসলাম নিহত হয়।
‘হলি আর্টিজান পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিরা নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। তখন আত্মগোপনে থেকে রিপন ফের জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এ উদ্দেশ্যে সে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে জঙ্গিদের সংগঠিত করতে থাকে। ’
নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এটা সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালে ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা সংগঠনের সদস্যদের উজ্জিবীত করতে সহায়তা করে। যেহেতু এখন হলি আর্টিজান মামলা চলমান রয়েছে সেহেতু এরই মধ্যে আবারো একটি ঘটনা ঘটিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল রিপনের।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
পিএম/এএ