জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের করে দেওয়ার পর হাসপাতালের সামনে গাছের নিচে সন্তান প্রসব করেন রীনা বেগম (৩০) নামে এক নারী। রীনা বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের বালাভিড় গোয়ালপাড়া এলাকার জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ডেলিভারি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এমন অজুহাত দেখিয়ে রীনাকে ছাড়পত্র দিয়ে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় হাসপাতালের নার্স সাবানা বেগম। ঘটনার পর রোগীসহ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তবে ঘটনার পর অভিযুক্ত নার্সকে তাৎক্ষণিক শো-কজ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রীনার স্বামী জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) গভীর রাতে রীনার প্রসব ব্যথা ওঠে। শনিবার সকালে তাকে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। রীনার আগে একটি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের কথা শুনে দুপুরে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে পঞ্চগড় অথবা ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন হাসপাতালের নার্স সাবানা বেগম। পরে টাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করতে গেলে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অমানবিক। আমরা চাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
রীনার ননদ রেজিনা বাংলানিউজকে বলেন, ছাড়পত্র দেওয়ার পরও আমরা হাসপাতাল ত্যাগ না করায় আমাদের হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন নার্স সাবানা বেগম। কিন্তু আমার ভাই জাহিদুল ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। একপর্যায়ে ওই নার্স হাসপাতাল থেকে তাদের বের করে দেন। সেখানে টিকতে না পেরে হাসপাতালের সামনের একটি গাছের নিচে অপেক্ষা করছিলাম আমরা। কিছুক্ষণ পর সেখানেই একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম দেন রীনা। পরে হাসপাতলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সোহাগি নবজাতক ও প্রসূতি রীনাকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে যান।
ঘটনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে প্রসূতিকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আফরোজা বেগম রীনা ও বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহমুদ হাসান। এসময় প্রসূতির পরিবারসহ স্থানীয়রা দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে নার্স সাবানা বেগম বাংলানিউজকে জানান, অন্তঃসত্ত্বার অবস্থা বিবেচনা করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল।
প্রসূতি রীনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, এর আগের দুই সন্তানের প্রথমটি সিজারিয়ান অপারেশন করা হলেও দ্বিতীয় সন্তান নরমাল ডেলিভারি হয়েছিল। এটি তিন নম্বর সন্তান। ছাড়পত্র দেয়ার পর আমি আমার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু নার্স সাবানা আমাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়।
বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসআইএম রাজিউল করিম রাজু বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনার কারণ জানতে শনিবার বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদ হাসানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
এনটি