ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গণশিক্ষা-উচ্চশিক্ষা বিভাগে দুদকের প্রতিবেদন, সুপারিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
গণশিক্ষা-উচ্চশিক্ষা বিভাগে দুদকের প্রতিবেদন, সুপারিশ

ঢাকা: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে একটি গোপন প্রতিবেদন ও সুপারিশ পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন   স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদন ও সুপারিশ (আকস্মিক পরিদর্শন সংক্রান্ত রিপোর্টসহ)   কমিশনের বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে     পৌঁছানো হয়।

দুদক সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চট্টগ্রামের কয়েকটি   প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় আকস্মিক পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট প্রণয়ন   করেন।

তার আলোকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছেন।  

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ৫টি বিদ্যালয়  পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় কমিশনের চেয়ারম্যান কাট্টলী নুরুল হক   চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯ জনকে অনুপস্থিত পান। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে অলসভাবে বসে ছিল এবং ঘোরাঘুরি   করছিল।

অন্যদিকে ভাটিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ১১ জন শিক্ষকের   মধ্যে ২ জনকে অনুপস্থিত পেয়েছেন। ভাটিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাজহারুল রোল নম্বর ২২ ও শিক্ষার্থী নয়নকে (রোল নম্বর ২৬) ২৬ জানুয়ারি অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উপস্থিত দেখানো হয়েছে। চট্টগ্রামের  সীতাকুণ্ড উপজেলার শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় প্রধান শিক্ষক   আবুল কালাম আজাদ-কে বিদ্যালয়ে উপস্থিত পাননি।

তাছাড়া শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি থেকে এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ২৭ জন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি দুই হাজার টাকার বিনিময়ে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ   করার প্রমাণ পেয়েছেন।   

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ থেকে বোঝা যায়, শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে না এসেই তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রমোশনের মাধ্যমে তাদের শিক্ষাবিমুখ করা হচ্ছে। কারণ তারা জানে   ফেল করলেও টাকার বিনিময়ে উত্তীর্ণ হওয়া যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। শিক্ষকরাও ছাত্র-ছাত্রীদের না পড়িয়ে অনৈতিক   সুবিধা নিয়ে অনৈতিককাজে জড়িয়ে পড়েছে। এক ভয়াবহ দুষ্টুচক্রে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা।

সুপারিশে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন মনে করে, ভয়াবহ এ বিশৃঙ্খলা ও অবক্ষয় থেকে আশু উত্তরণ প্রয়োজন। এ অবস্থার পরিত্রাণ না ঘটলে এসডিজি গোল-৪ অর্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা দুরূহ হয়ে পড়বে। এসব ঘটনা পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাজমান বিশৃঙ্খলা ও অবক্ষয়ের চিত্রবহন করে। বিদ্যালয়ের এমন অব্যবস্থাপনা সারা  বাংলাদেশের চিত্র কিনা, তা ভেবে দুর্নীতি দমন কমিশন বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।  

কমিশনের পত্রে আরো বলা হয়েছে, পরিদর্শনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জরুরি কর্মসূচি নেওয়া অত্যাবশ্যক।

দুদক চেয়ারম্যানের ১৫ পাতার আকস্মিক পরিদর্শন প্রতিবেদন সংযোজন করে   মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৯
আরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।