ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে পুলিশকে বিশেষ নজর দেয়ার তাগিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে পুলিশকে বিশেষ নজর দেয়ার তাগিদ

ঢাকা: মামলাগুলো যথাযথভাবে এবং দ্রুত নিষ্পত্তিতে পুলিশকে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য পুলিশের আলাদা টিম করার কথাও বলেছেন তিনি।

পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, কিভাবে মামলাগুলো যথাযথভাবে চলবে এবং সময়মতো মামলাগুলো শেষ হবে তার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বাস্তব যে আমাদের মামলাগুলো করা হয়- সেই মামলাগুলো সময়মতো নিষ্পত্তি হয় না। এখানে মামলা যারা পরিচালনা করে সেখানেও কিন্তু ঘাটতি আছে।  

মামলায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলাগুলো করার পর সেই মামলাগুলো নজরদারি করা, মামলাগুলো যেন সঠিকভাবে, তাড়াতাড়ি পরিচালিত হয় তার জন্য আপনাদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আপনাদের পক্ষ থেকে একটা টিমই থাকা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা যে মামলাগুলো করলেন সেই মামলাগুলোর ভাগ্য কী হলো, সেগুলো ঠিকমতো চললো কি-না, অনেক সময় দেখা যায়- এফআইআর তৈরি করে রাখা হলো- সেগুলোকে চার্জশিট দেওয়া, অভিযোগ করা, সাক্ষী নিয়ে আসা, অনেক সময় মামলা আটকে থাকে, সেখানে আবার আইনজীবী লাগে, অথবা সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলোর জন্য একটা আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।  

জঙ্গিবাদ দমনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে তৎপরতা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস এটা বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়। এটা সারা বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। আমরা এখানে সফলতার সঙ্গে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আপনাদের একটা স্ট্র্যাটেজি থাকতে হবে, কিভাবে কোন জায়গায় জঙ্গিবাদ হামলা করতে পারে, এর কোনো সম্ভবনা আছে কি-না, এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি এ বিষয়ে আমাদের আরও ট্রেনিংয়ের দরকার, প্রস্তুত থাকা দরকার।

‘এখন বেশি হচ্ছে সাইবার ক্রাইম। আমরা সাইবার ক্রাইম আইন করে দিয়েছি। অনেকে এর বিরোধিতা করে, কিন্তু বাস্তবতা হলো- যারা নিরীহ সাধারণ মানুষ, তাদের যে মানবাধিকার রয়েছে তা সুরক্ষা করবার জন্যই এ আইনটা করা হয়েছে। তাদের অধিকার সংরক্ষিত রাখতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে।

পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের শান্তি রক্ষায় পুলিশকে জনবান্ধব হয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভেতর আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করার কথাও বলেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমার নিজের কোনো ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি শুধু দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করে যেতে চাই, যেন বাংলাদেশকে একটা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। সেক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বলবো, পুলিশকে হতে হবে জনবান্ধব পুলিশ, যেটা জাতির পিতা নির্দেশ দিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি (বঙ্গবন্ধু) কিন্তু এই কথাই বলে গেছেন যে, এখন আর ঔপনিবেশিক শক্তি নয়, সেই ব্রিটিশ আমলও নয়, পাকিস্তান আমলও নয়, এটা বাংলাদেশ। আর এই দেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে আছে এই পুলিশেরই বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যদি শান্তিতে থাকে, নিরাপদে থাকে, নিজের পরিবারও নিরাপদে থাকবে, শান্তিতে থাকবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হলে নিজের পরিবারেরই উন্নতি হবে। প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে এই কথাটাই মেনে চলতে হবে এবং সেভাবেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বাংলাদেশকে উন্নত-সম্মৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আপনাদেরকে সেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে জনবান্ধব পুলিশ হয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের ভেতর আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনাদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। যা যা দাবি করেছেন সবই মেনে নিয়েছি। সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে, দুর্নীতি একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর মাদক একটা পরিবার নয়, একটা দেশকেই ধ্বংস করে। এ ধরনের কাজ যেন আর না হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ শান্তি পাবে, নিরাপত্তা পাবে। সেভাবেই আমরা দেশটাকে গড়ে তুলবো। কাজেই সেভাবে আপনারা কাজ করবেন, দায়িত্ব পালন করবেন।

এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেছুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, হাইওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, রাজবাড়ী জেলার এসপি আসমা সিদ্দিকা মিলি।

পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্যে আরও ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ, মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিকরণে আলাদা ট্রাইব্যুনাল, মাদক সংশোধনাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি, মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য বিশেষ ইউনিট প্রতিষ্ঠা, কূটনৈতিক মিশনগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
এমইউএম/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।