ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঋণের দায়ে নিঃস্ব জাহালমের পরিবার 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
ঋণের দায়ে নিঃস্ব জাহালমের পরিবার  জাহালম ও তার পরিবারের সদস্যরা। ছবি: বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: বিনা অপরাধে কারাগারে কাটলো জাহালমের দীর্ঘ তিনটি বছর। আর এই তিন বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে জাহালম ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবনে। তিন বছর পর জাহালমকে কাছে পেয়ে পরিবারের সদস্যরা আনন্দিত হলেও কষ্টের শেষ নেই তাদের। 

ছেলেকে মুক্ত করতে জাহালমের মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে এবং সর্বস্ব বিক্রি করার পরও কতই না মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তার অন্ত নেই।  

অন্যদিকে স্বামীকে মুক্ত করতে উকিলের খরচ যোগাতে স্ত্রী কল্পনা আক্তার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

তাতেও প্রয়োজনমত খরচ জোগাতে না পেরে অন্যের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়েছেন। শুধু সুদে টাকা নিয়েই শেষ হয়নি। অনন্ত ১০টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়েছেন জাহালমের পরিবার। এসব কিছু মিলিয়ে পরিবারটি বর্তমানে একেবারে নিঃস্ব।

জাহালমের মা মনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, তিন মেয়ে ও তিন ছেলের মধ্যে জাহালম মেঝ। লেখাপড়া না জানায় ভাল কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতে পারেনি জাহালম। তাই পাটকলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো সে।  

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছেলের এতো বড় ক্ষতি কেন করলো ওরা। অনেক দেরি করে হলেও ছেলে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমি এতে অনেক আনন্দিত। কিন্তু বিনা অপরাধে যে শাস্তি আমার ছেলে ভোগ করেছে এর বিচার চাই। আজ আমরা নিঃস্ব। আমাদের থাকার ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রতিদিন পাওনাদাররা বাড়ি আসে টাকার জন্য। মাঝে মাঝে খারাপ আচরণও করে তারা। এনজিওর লোকেরা পারলে তো থাকার ঘরটাও ভেঙে নিতে চায়। আমরা তো সব কিছু হারিয়েছি এখন ক্ষতিপূরণ কে দেবে।
 
জাহালমের বাড়ি।  ছবি: বাংলানিউজজাহালমের বড় ভাই শাহানুর বাংলানিউজকে বলেন, শুরু থেকেই ভাইকে মুক্ত করতে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। খরচ জোগাতে না পেরে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। তারা বাড়িতে আসে কিস্তি নেয়ার জন্য। দিতে না পারলে অপমান অপদস্ত করে। তবুও মুখ বুঝে সহ্য করে চলেছি। নির্দোষ নিরপরাধ ভাইয়ের জন্য আমাদের পরিবারটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর বিক্রি করে ঋণের অর্ধেক টাকাও শোধ করা যাবে না।

জাহালমের স্ত্রী পারুল আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ২০০২ সালে পারিবারিকভাবে জাহালমের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের এক বছর পরেই তাদের ঘরে চাঁদনী নামের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ভালই চলছিল তাদের সংসার। স্বামীর আয় রোজগারই ছিল একমাত্র ভরসা। হঠাৎ করেই তিনি জানতে পারেন ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তার স্বামীকে। অনেক চেষ্টা করেছেন স্বামীকে মুক্ত করতে। মেয়ের ভরণপোষণের জন্য বাধ্য হয়ে গত চার মাস আগে প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। সেখান থেকে যা বেতন পেতেন তার নিজের এবং মেয়ের জন্য খরচ করতেন। এছাড়া মাঝে মাঝে স্বামীর সঙ্গে দেখা করে তাকেও টাকা দিয়ে আসতেন। তবে এখন তিনি চাকরি না করে স্বামী ও মেয়ের দেখাশোনা করতে চান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।