ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাড়তি কাজের মূল্য চায় পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৯
বাড়তি কাজের মূল্য চায় পুলিশ পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জনসংখ্যার তুলনায় জনবল কম হওয়ায় বেশিরভাগ সময়ই নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরেও বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয় পুলিশ সদস্যদের। অন্যান্য পেষায় কর্মরতরা বাড়তি কাজের জন্য প্রণোদনা পেলেও এক্ষেত্রে বঞ্চিত পুলিশ। এছাড়া জেলাপর্যায়ে নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে পুলিশ সদস্যরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করলেও তাদের জন্য বাড়তি প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই।

রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে টেকনাফের শরনার্থী ক্যাম্প কেন্দ্রিক অবিরাম দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন বিষয় আমলে নিয়ে বাড়তি কাজের জন্য প্রণোদনা চেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (০৫ জানুয়ারি) ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯’ উপলক্ষ্যে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে পুলিশ সুপার (এসপি) ও তদুর্ধ কর্মকর্তারা এ দাবি জানান।

সভায় উপস্থিত একাধিক ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের একজন ডিআইজি ও এসপি পদের কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্যও নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বেশিরভাগ সময়ই তাদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের ওভারটাইমের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।

একজন এসপি বলেন, 'রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক দীর্ঘমেয়াদী নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। সেখানে দায়িত্ব পালনকারী সব পুলিশ সদস্যদের আলাদা ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। '

জেলা পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা নির্ধারিত কাজের বাইরে গিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু তারা বাড়তি কোন ভাতা পায়না। তাই তাদেরকে ট্রাফিক ভাতা প্রদানের দাবি জানান আরেক এসপি।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের একজন ডিসি বলেন, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাদক উদ্ধার করলে অর্থ পুরস্কার পান। মাদকদ্রব্য উদ্ধারে পুলিশও যেন আনুপাতিক হারে অর্থ পেতে পারে, এ ধরনের সুবিধা প্রদান করা হোক।

বাড়তি কাজের মূল্য চায় পুলিশ।  ছবি: বাংলানিউজ

অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিরা বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন সমস্যা- বিষয়টি তুলে ধরে একজন ডিআইজি বলেন, বিদেশিদের দেশে পাঠানোর জন্য পৃথক ডেপুটেশন সেন্টার এবং অর্থ বরাদ্দ দেয়া হোক।

একজন এসপি এবং ঢাকার একজন ডিসি জানান, পুলিশ বাহিনীতে অন্তত মোট ১০টি হেলিকপ্টার দিয়ে একটি হেলিকপ্টার স্কোয়াড গড়ে তোলা হোক। প্রতি বিভাগে অন্তত একটি করে হেলিকপ্টার প্রদানের দাবি জানান তারা।

প্রতি জেলায় একটি করে সাঁজোয়াযান-এপিসি দেওয়ার পাশাপাশি জেলার আইন শৃংখলা সভায় এসপিকে সভাপতিত্ব করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন আরেক এসপি।

সভায় একজন ডিআইজি বলেন, 'বিদেশের বিভিন্ন মিশনে পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করতে হবে। মাদক মামলার আলামত দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। '

শিল্প কারখানার বিকাশ ঘটলেও সেসব এলাকার নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শিল্প-কারখানা কেন্দ্রিক বিভিন্ন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সহায়তা নেওয়া হয়। তাই শিল্প পুলিশের জনবল বৃদ্ধির দাবি জানান এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। এয়ারপোর্ট এপিবিএনের জন্য ৪৬০ জন জনবলের পদ থাকলেও সকলের নিয়োগ হয়নি, তাই নিয়োগের মাধ্যমে জনবল বৃদ্ধির দাবি জানান আরেক কর্মকর্তা।

প্রত্যেক পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ স্থাপন করার দাবি জানিয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ লাইন্স হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ডাক্তার নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে পুরানো গাড়ি এবং গাড়ি সংকটের কারণে পুলিশ সদস্যদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই বিষয়গুলো সমাধানের দাবিও জানানো হয়।

এছাড়া সুপার নিওমারী পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতির ব্যবস্থা করায় ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশের জন্য স্থায়ীভাবে পদ সৃষ্টির দাবি জানান অনেকে। পাসপোর্ট অধিদফতরকে পুলিশের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মাদকের সঙ্গে বা অন্য কোন অপরাধের সঙ্গে যদি পুলিশ সদস্যরা জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বলবৎ থাকবে।

সবশেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ২০০৮ এর পুলিশ এবং এখনকার পুলিশ এক নয়। বর্তমানে পুলিশের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের তৎপরতার কারণেই এখন একটা নিরাপদ দেশের নাম বাংলাদেশ। আপনারা দেশের নিরাপত্তার জন্য এতো কষ্ট করছেন এজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আপনাদের দাবিগুলোর সবগুলোরই যৌক্তিক সমাধান হবে।

‘পুলিশের কোন কোন জায়গায় সুনির্দিষ্ট জনবল লাগবে প্রধানমন্ত্রী স্পেসিফিক প্রস্তাব দিতে বলেছেন। একের পর এক পর্যায়ক্রমে এর অনুমোদন দেওয়া হবে। ’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা যে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করি সেগুলো মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে কোটি টাকা কিন্তু আমাদের কাছে মূল্যহীন। আমরা সেগুলো ধ্বংস করে ফেলি। '

অবৈধ বিদেশীদের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক অবৈধ বিদেশী কারাগারে রয়েছেন। তাদের কারাভোগের মেয়াদ শেষ হলে অনেকক্ষেত্রে আমরা নির্ধারিত দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু তাদের সাড়া না পাওয়া গেলে আসামীদেরকে কারাগারেই রাখতে হয়। আমরা তাদেরকে স্ব স্ব দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।

এছাড়াও প্রায় ৩৫ লাখ মামলা জট রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার কথাও জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, যারা বিসিএস দিয়ে পুলিশে যোগ দিয়েছে তাদের সবারই স্বপ্ন থাকে এসপি হওয়ার। তাই এসপিদের মেয়াদ ও দায়িত্ব নিয়ে কিছু বিধান তৈরির জন্য আমি আইজিপিকে বলেছি।

অপরাধের নতুন নতুন ক্ষেত্র পুলিশ সদস্যদের সামনে আসছে। অপরাধীরা নতুন নতুন কৌশলে ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম করে যাচ্ছে। সামনের দিনে দক্ষতার সঙ্গে সেগুলো আপনাদের মোকাবেলা করতে হবে। আপনারা মতবিনিময় করে সামনের দিনগুলোর একটা কর্মপরিকল্পনা দিয়ে যাবেন বলেও এসময় মস্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯
পিএম/এইচএমএস/এমকেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।