ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাবনা-ঢালারচর নতুন রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিদর্শন

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
পাবনা-ঢালারচর নতুন রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিদর্শন

ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথের নবনির্মিত পাবনা-ঢালারচর সেকশনে পরীক্ষামূলক ট্রেন নিয়ে এই রেল সেকশন পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের সরকারি পরিদর্শক, পশ্চিমাঞ্চল প্রকৌশলীরা। ট্রেন চলাচলের উপযোগী হলে এই রেলপথ দিয়ে শিগগিরই ঢালারচরবাসী ট্রেনে চড়ার সুবিধা পাবেন।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে রওনা দিয়ে পাবনায় পরীক্ষামূলকভাবে এসে পৌঁছায়। পরে সকাল সোয়া ১০টায় পাবনা স্টেশন অতিক্রম করে দুপুরে ঢালারচর গিয়ে পৌঁছায়।

সেখান থেকে বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করে ফের সন্ধ্যায় ফিরে আসে।       

‘ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় নবনির্মিত ঈশ্বরদী-ঢালারচর সেকশনে ১০টি কোচ নিয়ে এই রেল সেকশনে ২৫ জন কর্মকর্তাসহ অর্ধ-শতাধিক রেলওয়ে কর্মচারী দল নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ওই ট্রেনের পরিচালক ছিলেন আফজাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ছিলেন আবু হানিফ। ট্রেনে লোকোমাস্টার (এলএম) চালক হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন রবিউল ইসলাম ও সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) শাকিল আহমেদ।       

সকাল ৯টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলে ট্রেনটি এক ঘণ্টায় পাবনা স্টেশনে পৌঁছায়। পাবনা স্টেশন ছাড়ার পর নবনির্মিত রাঘবপুর, দুবলিয়া, তাঁতীবন্দ, চিনাখড়া, কাশিনাথপুর হয়ে বাঁধেরহাট এবং ঢালারচর এসে পৌঁছায়। এই সময় প্রতিটি নতুন স্টেশনে প্লাটফর্মের উচ্চতা, শেডের উচ্চতাসহ লাইটিং ও রেললাইন স্থাপনের গভীরতা পরীক্ষা করেন রেলওয়ে প্রকৌশলীরা।

এদিকে স্বাধীনতার পর এই প্রথম এই অঞ্চলে ট্রেন দেখে উৎসুক শিশু থেকে শুরু করে সব নারী পেশার মানুষ ছুটে আসেন, একঝলক ট্রেন চলাচল দেখতে। জীবনের প্রথম অনেক শিশুরা ট্রেন দেখে তাদের উচ্ছ্বাস অনুভূতি প্রকাশ করে।    
   
এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে নগরবাড়ী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। সে সময় জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পাবনা শহরের টাউন হল মুক্তমঞ্চ মাঠে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পাবনার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।  

এই রেলরুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সরকারি পরিদর্শক ডি এন মজুমদার, পরামর্শক আনোয়ারুল কবীর, মো. শাহজাহান আলী, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহীর প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহী দপ্তরের প্রধান  প্রকৌশলী, আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান মাসুদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মিজানুর রহমানসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা।
 
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে দপ্তর রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী, আল-ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে বর্তমান রেলবান্ধব সরকারের আমলে, এই প্রকল্প বহুল প্রতীক্ষিত একটি বড় প্রকল্প।  ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথের পাবনা পর্যন্ত, প্রথম ধাপে ২৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হওয়ার পর গতবছর থেকে পাবনা-রাজশাহী রেলরুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। মোট ৭৮ কিলোমিটার নতুন রেলরুটের বাকি ৫৩ কিলোমিটারের নির্মাণ দ্বিতীয় ট্রেন চলাচলের জন্য যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে।  আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই এই নতুন রেলপথের ঢালারচর পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।

রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সরকারি পরিদর্শক ডি এন মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে পরিদর্শন ট্রেন চলাচলের প্রতিবেদন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হবে। তবে এই রুটে এখন ট্রেন চলাচল করানো সম্ভব। তথাপি নতুন রেলস্টেশনে, নতুন কোচ, লোকবলও প্রয়োজন, এই প্রকল্প সরকারের বৃহৎ একটি প্রকল্প। এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।    

ঢালারচর-পাবনা-ঈশ্বরদী রেলরুটে পূর্ণাঙ্গ ট্রেন চলাচল শুরু হলে উত্তর জনপদের আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ব্যবসা-বাণিজ্যে গুণগতমানের পরিবর্তন ঘটবে। রেলপথে পণ্য পরিবহনে স্বল্প খরচের কারণে এই এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এমনই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯   
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।