প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলনা মহানগরীতে অক্সিজেন কোম্পানির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এলপি গ্যাসের অবৈধ ‘ক্রস ফিলিং’ ব্যবসা (অবৈধভাবে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা)। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
তবে মেসার্স খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড তাদের প্রতিবাদলিপিতে বলছে, ‘প্রতিবেদনটিতে তথ্য বিভ্রাট করা হয়েছে। যা অসত্য, বানোয়াট, মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ’
প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে ঢাকার মেসার্স সুপার গ্যাস লিমিটেডের শেয়ার দ্বারা সীমিত দায় কোম্পানি গাজীপুরের মেসার্স সুপার গ্যাস লিমিটেড, যার সঙ্গে মেসার্স খুলনা অক্সিজেন লিমিটেডের মালিকানা সংক্রান্ত কোনো সম্পর্ক নেই। দু’টি কোম্পানিই আলাদা-আলাদা আইনানুগ স্বত্ব মাত্র। যেহেতু সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে দু’টি কোম্পানিই ব্যবসায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেহেতু উভয়ের মধ্যে সু-সম্পর্ক থাকিতেই পারে। তবে প্রকাশিত সংবাদের ঘটনার সঙ্গে মেসার্স সুপার গ্যাস লিমিটেড কোনোভাবেই জড়িত নয়। প্রকৃত সত্য হইতেছ যে, জনৈক মো. রিয়াজ উদ্দিন তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য খুলনা অক্সিজেন লিমিটেডের একটি টিনশেড মাসিক ২০,০০০/- টাকা ভাড়া ধার্যক্রমে চুক্তি করে। ’
‘বাজার থেকে বিভিন্ন ব্রান্ড/নামের এলপিজি গ্যাসের খালি সিলিন্ডার ক্রয় করিয়া সেগুলি ভাড়া নেওয়া খুলনা অক্সিজেন লিমিটেডের একাংশে সংরক্ষণ করতঃ পরিমাণে বেশি হইলে বাজার/গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক মাত্র ২০/-(বিশ) টাকা বিনিময় মূল্যে এক্সচেঞ্জ করিয়া দিতেন। তাহাছাড়া মেসার্স খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড বাজারে বিদ্যমাণ অন্য ব্রান্ড/নামের এলপিজি গ্যাসের খালি সিলিন্ডার ক্রয় করিয়া বোটলিং করার কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে কখনো জড়িত ছিল না কিংবা বোটলিং করিয়া কম মূল্যে কখনোই বাজারজাত করে নাই। মো. রিয়াজ উদ্দিনের খালি এলপিজি সিলিন্ডার এক্সচেঞ্জ ব্যবসা লাভজনক এবং সম্ভানাময় হওয়ায় এতে ঈর্ষান্বিত হইয়া কোনো ব্যক্তিবিশেষের/মহলের দ্বারা প্রভাবিত হইয়া হয়তো প্রতিবেদক এই সংবাদ পরিবেশন করিতে পারেন। ’
প্রতিবেদকের বক্তব্য
বাংলানিউজের প্রতিবেদক বলছেন, মেসার্স খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও সরেজমিনে দেখা গেছে উল্টা চিত্র। সেই কোম্পানির মধ্যেই ক্রস ফিলিং করা হয়। সেখানে রিজার্ভারও রয়েছে। পাওয়া গেছে গ্যাস বহনকারী গাড়িও। এছাড়া এলপি গ্যাস রিফিলিংয়ের মেশিনও পাওয়া গেছে সেখানে, যার ছবি ও ভিডিও বাংলানিউজের কাছে আছে। মেসার্স খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড যে মেসার্স সুপার গ্যাস লিমিটেডের নামে রিফিল করে সিলিন্ডার বিক্রি করে, তার চালানও (নথি) রয়েছে বাংলানিউজের কাছে। এতে প্রমাণিত হয়, তারা এখানে রিফিল করে সিলিন্ডার বিক্রি করে। খুলনা অক্সিজেন কোম্পানির কার্যালয় ও এর পাশে টিনশেড ঘরে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডসহ নয়টি কোম্পানির কয়েক হাজার খালি সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে। এখানে রয়েছে এলপি গ্যাসের রিজার্ভার ট্যাংক ও সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস রিফিল করার মেশিন-যন্ত্রপাতি ও লোডিং ট্যাংক। এসবই এ কোম্পানির অবৈধ গ্যাস রিফিলিংয়ের প্রমাণ। এ সংক্রান্ত আরও তথ্যপ্রমাণ আছে বাংলানিউজের হাতে।
প্রতিবেদক আরও বলছেন, বাংলানিউজসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে নিউজ প্রচার হওয়ার পর রাতের আঁধারে সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস রিফিল করার মেশিন-যন্ত্রপাতিসহ সংশ্লিষ্ট মালামাল সরিয়ে ফেলে কোম্পানিটি। পরিবেশবাদীরা বলছেন, এ ধরনের ফিলিং প্রক্রিয়া যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনই এই কোম্পানির গ্যাসের ব্যবহারও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এর কারণ, অনুমতিপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো স্বয়ংক্রিয় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এলপি গ্যাস বাজারজাত করে। এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনী দ্বারা পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ড লাগোয়া খুলনা অক্সিজেন কোম্পানির অবৈধ গ্যাস রিফিলিংয়ের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হতে পারে।
খুলনার রূপসা শিপইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি থেকে শহরের হাসপাতালসহ বহুতল সব বাণিজ্যিক ভবনে একসময় অক্সিজেন সরবরাহ হতো। তবে বর্তমানে এ কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। ২০০৬ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনা অক্সিজেন লিমিটেডে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার স্থাপন করার সময় অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্ল্যান্টের রোটার কমপ্রেসার বিস্ফোরিত হয়। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
এইচএ/