ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় এবার হচ্ছে না ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
খুলনায় এবার হচ্ছে না ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ নৌকাবাইচ।

খুলনা: অর্থের অভাবে এবছর খুলনার রূপসা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ হচ্ছে না। প্রতিবছর অক্টোবর মাসে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এবার নভেম্বরের অর্ধেক হয়ে গেলেও হয়নি নৌকাবাইচ।

এবার বাইচ না হওয়ায় এ অঞ্চলের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাইচকে ঘিরে রূপসা নদীর দু’পাড়ে উৎসবের মেলা বসতো।

আত্মীয়-স্বজনেরা বাইচ উপলক্ষে বেড়াতে আসতেন।

২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর বিকেলে ১৩ তম খুলনা নৌকা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর একই সময় নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হবে বলে সবাই আশা করলেও একটি বেসরকারি ফোন কোম্পানি শেষ সময় এসে স্পন্সর না হওয়ায় ভেস্তে গেছে নৌকা বাইচের আয়োজন। এর কারণে বিনোদন বঞ্চিত হলো খুলনার মানুষ।

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতার ১৩ বছর ধরে আয়োজন করে আসছিল নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। হতো লাঠিখেলা। খানজাহান আলী (র.) সেতুর (রূপসা সেতু) নিচে অনুষ্ঠিত হতো লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বসতো লাখো মানুষের মিলনমেলা।

জানা যায়, মহানগরীর এক নম্বর কাস্টম ঘাট থেকে রূপসাসেতু পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতো এ বাইচ। প্রতিযোগিতায় তিনটি গ্রুপে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০টির বেশি বাইচ দল অংশগ্রহণ করতো। বাংলালিংকের সহযোগিতায় ২০০৫ সালে এ নৌকাবাইচের যাত্রা শুরু হয়। তারা ৮ বছর সহযোগিতা করে। পরে গ্রামীণফোন পাঁচবছর চালায় বাইচটি।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, নৌকাবাইচ এদেশের লোকালয় ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ফসল। খুলনায় দীর্ঘদিন ধরে রূপসা নদীতে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হতো। আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসত বাইচের আনন্দ উপভোগ করতে। নদীর দু’পাড়ে লাখো মানুষের উৎসবের মিলনমেলা বসত। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এবার শুনেছি স্পন্সরের অভাবে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হবে না। যা খুলনাবাসীর জন্য একটি দুঃসংবাদ।

তিনি সরকারি-বেসরকারি অথবা বাণিজ্যিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে নৌকাবাইচে আর্থিক সহযোগিতা করে চালুর রাখার দাবি জানান।

নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিককেন্দ্রে সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, অনেক চেষ্টা করেও স্পন্সর পেলাম না। অর্থের অভাবে এবার নৌকাবাইচের আয়োজন করতে পারিনি। নৌকাবাইচে যেসব মাঝিরা অংশ নিতেন, তারা শুধু বলছেন খুলনার একটি ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে পারে না। আপনারা শুধু তারিখ দেন আমরা এসে বাইচ করে যাই। আমাদের কোনো টাকা বা পুরস্কার দেওয়া লাগবে না।

তিনি আরও বলেন, অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিগত দিনে বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপরে নদীর পানি কমে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে নৌকা আসতে অসুবিধা হয়। বিগত দিনে আমরা তো স্পন্সর ছাড়া কখনও বাইচ করিনি। চাঁদা তুলে তো কখনও করিনি। এখন নিজেদের উদ্যোগে কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অচিরেই সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বাইচের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।