ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বছরে কোটি টাকা আদায়

বেড়ায় যমুনা নদীতে মেয়রের অবৈধ নৌবন্দর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
বেড়ায় যমুনা নদীতে মেয়রের অবৈধ নৌবন্দর বৃশালিখার অবৈধ ঘাটে নোঙর মালবাহী ট্রলারগুলো। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: পাবনার বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীতে অবৈধ নৌবন্দর প্রতিষ্ঠা করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আদায় করছেন পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বাতেন। আর এই অবৈধ নৌবন্দর থেকে একটি টাকাও রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। গত ১০ বছরে অবৈধ নৌ বন্দরের মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে নৌ-বন্দর পরিচালনায় একমাত্র অনুমোদিত ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নদী কেন্দ্রিক মালামাল পরিবহন ও পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালামাল খালাস, শ্রমিক ও পণ্য ওঠানামা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম পরিচালনায় বিআইডব্লিউটিএ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

অথচ, সব নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে অবৈধ নৌ-বন্দর তৈরি করে তা পরিচালনা করছেন পাবনার বেড়ার পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বাতেন। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখায় হুরাসাগর নদীতে স্থাপিত এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করলেও প্রশাসন অবৈধ এ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।  

বৃশালিখা ঘাট থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মালবাহী নৌযানগুলো বৃশালিখার অবৈধ ঘাটে নোঙর করায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

সরেজমিনে বেড়া পৌরসভার বৃশালিখায় গিয়ে দেখা যায়, বন্দর পরিচালনার জন্য হুরাসাগর নদের পাড়ে বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেন একটি একতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। সেখানে ঝুলানো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘বৃশালিখা বেসরকারি রাজঘাট, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় আব্দুল বাতেন’। পাশেই ঘাটে নোঙর করা ১০টি মালবাহী জাহাজ থেকে সিমেন্ট, কয়লা, ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী নামানো হচ্ছে। পরে ট্রাকে সেসব পণ্য নেওয়া হচ্ছে স্ব স্ব গন্তব্যস্থলে।

পোটন ট্রেডার্স নামে একটি পণ্য পরিবহন সংস্থার প্রতিনিধি সোহরাব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাঘাবাড়ী বন্দরে একটি জাহাজ নামিয়ে আনলে আমাদের অবশ্যই সরকার নির্ধারিত টোল দিতে হত। যা এই বৃশালিখা ঘাট থেকে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমরা খুব সহজেই তুলনামূলক অনেক কম খরচে বৃশালিখা ঘাটে পণ্য আনা নেওয়া করতে পারি।  

তিনি বলেন, বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে শ্রমিক সংকটসহ নানা জটিলতা রয়েছে। ফলে, পণ্য নিয়ে জাহাজ থেকে নামাতে সময় অনেক বেশি লাগে। বেড়া বৃশালিখা ঘাটে সে সমস্যা নেই।  

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত আইনানুসারে কেবলমাত্র বিআইডব্লিউটিএ দেশে নৌবন্দর পরিচালনায় বৈধ কর্তৃপক্ষ। বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের নিকটবর্তী এলাকায় তারা সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থাকে নৌবন্দর পরিচালনায় অনুমোদন দেননি। স্থানীয় সরকার খেয়া পারাপারের জন্য ঘাট ইজারা দিতে পারে, কিন্তু পণ্যবাহী জাহাজ নোঙর করে বৃশালিখা ঘাটে যেভাবে বন্দরের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।

তিনি আরো বলেন, বাঘাবাড়ি ঘাটে নোঙর করা প্রতিটি মালবাহী জাহাজকে প্রতি টন মাল খালাসের জন্য ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দিতে হয়। বৃশালিখা ঘাটের কারণে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঘাটটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে কয়েক দফা লিখিত অনুরোধ জানিয়েছি। অজ্ঞাত কারণে তারা এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বেড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, বৃশালিখা ঘাটটি বেড়া পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত হয়। এটা উপজেলা প্রশাসনের বিষয় নয়। আমরা এই ঘাটটির ব্যাপারে  অবগত নই। এই ঘাটে মালবাহী কোনো জাহাজ নোঙর করে কি না আমরা জানি না।

বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন বাংলানিউজকে বলেন, বৃশালিখা ঘাট কোনোভাবেই অবৈধ নয়। স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে, ঘাট থেকে অর্জিত রাজস্ব অবশ্যই স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ পাবে। যেহেতু, বৃশালিখা ঘাট পৌর এলাকার মধ্যে, তাই পৌরসভা সেখান থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করছে। এখানে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদনের কোনো প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।