সরেজমিনে জানা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের জিগাডেঙ্গর, মাকরাই, ঘোড়ামারা, পাঞ্জাচালা, হরিণাচালা, তেঘড়ি, সন্ধানপুর ইউনিয়নের পাড়বাহুলী, চৌরাশা, দিগর ইউনিয়নের মাইদার চালা এবং সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের দিঘীরচলা, ছোটবাজার, বেড়বাড়ী, গড়বাড়ী, বহেড়াতৈল ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী, আমবাগ, এলাকায় সবচেয়ে বেশি পাহাড় ও টিলা কেটে সমতল ভূমি বানানো হচ্ছে।
একশ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী গত দুই মাস যাবৎ পাহাড় এবং টিলার ভোগদখলকারীদের সবজি চাষের উপযুক্ত জমি বানিয়ে দেয়ার নাম করে উঁচু পাহাড়-টিলা কেটে লালমাটি আশপাশের ইটভায় বিক্রি করছে।
ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে জিগাডেঙ্গর গ্রামের মৃত এবাদত আলীর ছেলে আবুবকর এবং মৃত আ. বাছেদের ছেলে আবুল হোসেন, তার ভাই টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু প্রায় তিন একর ভূমির দুটি বড় পাহাড়ের গাছ এবং পাহাড় কেটে ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন। ফলে ওই এলাকা এখন অনেকটাই সমতল ও পুকুরে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে আবুল হোসেন ও নুরুল ইসলাম নুরু জানান, ওই ভূমি পাহাড় বা টিলা হলেও তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। তারাই ওখানে গাছ রোপন করেছিলেন। প্রয়োজনের তাগিদে গাছ কেটে লালমাটি বিক্রি করেছেন।
সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের দিঘীরচালা ও ছোটবাজার এলাকায় একটি গ্রাম্য রাস্তাসহ টিলা কেটে স্থানীয় প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী লালমাটি বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন, ওই গ্রামের আ. গফুর, আব্দুল আজিজ ও নুরুন্নবী। একই ইউনিয়নের গড়বাড়ী এলাকার মৃত নওশের আলীর ছেলে ইদ্রিস আলী স্থানীয় বখতিয়ারচালা নামক টিলা কেটে সমতল করছেন।
ইদ্রিস আলী জানান, বখতিয়ারচালার ওই জায়গাটুকু তার পৈত্রিক সম্পত্তি। শিয়ালের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে তিনি পাহাড় কেটে সবজি চাষের উপযোগী ভূমি তৈরি করছেন। এতে তিনি দোষের কিছু দেখছেন না।
সরকারের ভূমি ব্যবহার আইন-২০১৬ অনুযায়ী ‘যেসব জমি বনভূমি হিসেবে টিলা, পাহাড় শ্রেণি, জলাভূমি, চা বাগান, ফলের বাগান, রাবার বাগান ও বিশেষ ধরনের বাগান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে; তার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এসব স্থানে কোনো ধরনের আবাসিক কিংবা শিল্প-কারখানা স্থাপন করা যাবে না। করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল ও জলাভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এসব স্থান শুধু মৎস্য উৎপাদনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বালু মহাল, পাথর মহাল, বাগান, প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না’। এ আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা হবে। এ আইনের অপরাধ দমনে জরুরি প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবেন। অথচ উল্লেখিত এলাকাগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবাধে দিনরাত পাহাড় ও টিলা কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করছে।
এ বিষয়ে সখীপুরের কাকড়াজান ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ জানান, দিঘীরচালা এলাকায় রাস্তার পাশে মাটি কাটার কাজ তিনি লোক পাঠিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত তিনি তাদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করবেন। তিনি জানান, পাহাড় কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। বৃহত্তর স্বার্থে এটা কোনভাবেই সহ্য করা হবেনা।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরনাহার বেগম জানান, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। পূর্বানুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার এখতিয়ার কারো নেই। পাহাড় ও টিলা কাটার বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোস্তারী কাদেরী বাংলানিউজকে জানান, পাহাড় ও টিলা কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার কোনো নিয়ম নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে জমির শ্রেণি পরিবর্তনকারীদের ডেকে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। তারা কেউ না এলে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
এসএইচ