ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যানার-বিজ্ঞাপনের পেরেকে ক্ষত-বিক্ষত রাজধানীর গাছ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
ব্যানার-বিজ্ঞাপনের পেরেকে ক্ষত-বিক্ষত রাজধানীর গাছ

ঢাকা: গাছ মানুষের সবচেয়ে বড় ও পরম উপকারী বন্ধু। অথচ এর প্রতি মানুষের আচরণ মোটেও বন্ধুসুলভ নয়। পেরেক ঠুকে ব্যানার, ফেস্টুন, বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় রোগাক্রান্ত হচ্ছে গাছ, সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে রাজধানীর সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, গাছে পেরেক ঠুকলে এর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, অকালে প্রাণ হারায় তারা। তবুও থেমে নেই গাছের ওপর এমন নির্যাতন। কোথাও কোথাও বিজ্ঞাপনের জ্বালায় গাছই চেনা দায়!

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রায় প্রতিটি গাছেই দেখা যায় পেরেক ঠুকে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর চিত্র। প্রধান সড়কের পাশের গাছ, মহল্লার অলিগলি, এমনকি সড়ক বিভাজকে (রোড ডিভাইডার) লাগানো গাছেও লেমিনেটিং পেপার অথবা টিন দিয়ে বাড়ি ভাড়া, সাবলেট, টিউশনি, কোচিং সেন্টার, কাজী অফিস, জমি বিক্রয়, ড্রাইভিং শেখানো, স্পোকেন ইংলিশ, ডেকোরেটর,  রাজনৈতিক দলের ব্যানার থেকে শুরু করে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিজ্ঞাপন-প্রচারণা চলছে।

বাসা-বাড়ির দেওয়ালে পেরেক মারা কষ্টসাধ্য ও ঝামেলাপূর্ণ। বিপরীতে গাছে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক মারা অনেকটাই সহজ। একারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পেরেকের নিষ্ঠুর আঘাতে বিজ্ঞাপন প্রচারের সহজ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন গাছকেই। বড় বড় পেরেক দিয়ে এমনভাবে বিজ্ঞাপন গাছে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে, যা সহজে খুলে ফেলাও যায় না।

প্রতিটি গাছেই পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে বিজ্ঞাপন।  ছবি: বাংলানিউজ

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খান বাংলানিউজকে বলেন, পেরেক মারলে গাছের দুই ধরনের ক্ষতি হয়। আঘাত পেলে আমাদের যেমন কষ্ট হয়, তেমনি গাছের যেহেতু জীবন আছে, তাই সেও কষ্ট পায়। আরেকটি হলো, আঘাত করলে আমাদের শরীর থেকে যেমন রক্ত বের হয়, তেমনি গাছ থেকে এক ধরনের রস বের হয়। আঘাতের স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত দিয়ে ছত্রাক আক্রমণের মাধ্যমে গাছে ইনফেকশন হয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। আবার, গাছের ওই স্থানে পানি জমে পচনও ধরে। ইনফেকশনজনিত কারণে অনেক গাছ বয়স হওয়ার আগেই মারা যায়। এটি একটি অমানবিক কাজ। অবিলম্বে গাছে পেরেক মারা বন্ধ করা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, গাছ দুই প্রক্রিয়ায় পরিবহন ব্যবস্থা সম্পন্ন করে- জাইলেম আর ফ্লোয়েম। পানির সঙ্গে থাকা খনিজ লবণ জাইলেম টিস্যুর মাধ্যমে গাছের উপরের দিকে প্রবাহিত হয়। আবার গাছের পাতায় যে খাদ্য তৈরি হয়, সেটা গাছের ছাল দিয়ে ভেতরে যায়। ছালের নিচে থাকে ফ্লোয়েম। গাছে পেরেক মারা হলে ফ্লোয়েম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পাতায় উৎপাদিত খাদ্য শিকড়ে যেতে বাধা পায়। অন্যদিকে, পেরেক মারা থাকলে সেই জায়গা দিয়ে পানি উপরের দিকে যেতে পারে না। পেরেক মারা স্থানে গাছ প্রয়োজনীয় পানি ও খনিজ লবণ না পাওয়ায় সেখানকার টিস্যুগুলো ধীরে ধীরে মারা যায়। গাছের চারপাশে যদি এভাবে একাধিক পেরেক মারা হয়, তাহলে গাছটির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এবং একপর্যায়ে মারা যায়।

বড় বড় বিজ্ঞাপনে ঢেকে আছে গাছগুলো।  ছবি: বাংলানিউজ

গাছে পেরেক মারা প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অনেক গাছ থেকে পেরেক তুলেছি। অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। আগামী তিন-চারদিনের মধ্যে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। গাছে ও দেয়ালে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন লাগানো হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তবে, গাছে পেরেক লাগানোর বিষয়ে জনগণকেও সচেতন হতে হবে।

গাছে পেরেক ঠোকা অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, গাছের ক্ষতি মানে মানুষের নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনা। তাই, এটি বন্ধে কঠোর আইন হওয়া দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
আরকেআর/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।