ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুঁকি নিয়েই বাঁশের সাঁকো পারাপার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
ঝুঁকি নিয়েই বাঁশের সাঁকো পারাপার! ঝুঁকি নিয়েই বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছেন একজন নারী। ছবি: বাংলানিউজ

নেত্রকোনা: আবালবৃদ্ধবনিতা, জন্মের পরে গ্রামবাসী যোগাযোগের প্রধান ও একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থায় মঙ্গলেশ্বরী নদীর ওপরে কোনো ব্রিজ দেখেনি। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি ছাড়া কখনো চলাচলের তৌফিকও হয়নি বলেও গ্রামবাসীর অভিযোগ। প্রত্যেকে ঝুঁকি নিয়ে একটি বাঁশের সাঁকোর মাধ্যমে পার হচ্ছে প্রতিদিন।

মঙ্গলেশ্বরী নদীটি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, কায়তাপুর, শ্রীপুর, বিলপাড়সহ ১০/১২টি গ্রামকে অন্যান্য সবকিছু থেকে আলাদা করে রেখেছে বলে স্থানীয়দের মন্তব্য।

ওই ইউনিয়নের বাউসাম বাজার পাড়ি দিয়ে বামনগাঁও গ্রাম।

আর সেই গ্রাম থেকে পরবর্তী গ্রাম বিশ্বনাথপুর। সেখানে যেতে হলে মঙ্গলেশ্বরীর পাড়ি দিতে গিয়ে যত দুর্ভোগ। ব্রিজ না থাকায় বাঁশের সাঁকোই যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা।

ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে এসেছে মঙ্গলেশ্বরী নদী। গ্রামগুলোর বুক চিরে বয়ে চলা এই নদীটি ডিঙিয়েই হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত করতে হয় প্রতিদিন।

উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত জীবন ধারায় পিছিয়ে থাকা গ্রামের মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুলে নদী পার হওয়ার দুঃসাহসিকতা আর দুর্ভোগের যেন কোনো অন্ত নেই।

বাড়িঘর, হাট-বাজার, কর্মস্থল বা শিশুদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যেতে প্রত্যেককে সাঁকোটি বেয়ে নদীটি পার হতে হয়। আর পার হতে গিয়ে কখনো কেউ হয়েছেন রক্তাক্ত, ভেঙেছেন হাত-পা বা কারো কোমর!ঝুঁকি নিয়েই বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছে স্থানীয়রা।  ছবি: বাংলানিউজএমনিতে একজন সুস্থ মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে সাহস সঞ্চার করে সময় ক্ষেপণ করলেও বাঁশের সাঁকো ঝুলে কোনোভাবে নদী পার হয়। তবে, ভয়াবহ দৃশ্যের সৃষ্টি হয় কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে পারাপারের সময়। সেই দৃশ্য যেন ভাষায় প্রকাশ করার নয়।

দুর্ভোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বাংলানিউজকে জানান, ব্রিজ না থাকায় বড় একটি হাড়িতে একজন গর্ভবতী নারীকে বসিয়ে সেটি রশি দিয়ে বেঁধে নদী পার করতে হয়েছে! পরিস্থিতিতে রোগীর স্বজনরাও চোখে কিছু দেখেন না সর্ষে ফুল ছাড়া!

বৈঠাখালি ও বিশ্বনাথপুর গ্রামের বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দা আবু সাহেদ (৮৫), ইউসুফ আলী (৮০), আব্দুল হামিদ (৭৮), লোকমান হেকিম (৬০), রফিকুল ইসলাম (৪৮), আমেনা খাতুন (৬০) ও সেনোরা বানু (৫৬)।

তাদের অভিযোগ, বছর আর যুগের পর যুগ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হলেও গ্রামবাসীকে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে আজও ফিরে তাকাননি কোনো জনপ্রতিনিধি!

তারা আরও জানান, দেশজুড়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। অথচ কী কারণে আর কোনো অপরাধে তাদের গ্রামে আজও এই করুণ পরিণতি তা কেউ বলতে পারেন না। সরকার নির্বাচিত করতে আর সবার মতো তারাও ভোট দেন তবে, কেন এই বৈষম্য?

সাহেদ, হেকিম জানান, মঙ্গলেশ্বরীর সংযোগস্থলে আগের গ্রাম রয়েছে বামনগাঁও, কান্দাপাড়া ও বাওসাম এবং পশ্চিমে রয়েছে বিশ্বনাথপুর, কায়তাপুর, শ্রীপুর, বিলপাড়। ছোট একটি মাত্র ব্রিজ না থাকার কারণে করুণ পরিণতি গ্রামবাসীর।

খারনৈ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে উপজেলার সমন্বয় সভায় বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনোক্রমে কোথাও কোনো সুদৃষ্টি ফেরানো সম্ভব হয়নি। অথচ ৫০ মিটারের ছোট একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে অনেক সহজতর হত গ্রামবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক দিকে আসতো সচ্ছলতা। কিন্তু কেউ ভাবেননি সেসব কথা। ঝুঁকি নিয়েই বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজখারনৈ ইউপির চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক জানান, সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য ব্রিজ করাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন তিনি। গ্রামবাসীর এই দুর্ভোগে তিনি নিজেও লজ্জিত। কিন্তু উপজেলা পরিষদসহ সব ধরনের সভায় বারবার বলেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

কলমাকান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে অবগত নন তিনি। তবে, এবার জানার পর তিনি এলাকাটি পরিদর্শন করবেন। পরে প্রয়োজন সাপেক্ষে নেত্রকোনা-১ আসন (দুর্গাপুর, কলমাকান্দা) সংসদ সদস্য মানু মজুমদারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজ করে দেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।