প্রতিদিনই এগিয়ে চলছে স্বপ্নের বিনির্মাণ। ৯২৮টি পাইলের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৮৮১টির।
ভারী ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মাণযজ্ঞ চলছে অবিরাম। বড় বড় বার্জ আর ক্রেন বিশাল এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাথর-বালুর স্তূপ। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন-যন্ত্র চলছে দিন-রাত। দীর্ঘদিনের লালন করা স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়ন দেখে বেজায় খুশি খুলনাঞ্চলের মানুষ। সেতুর নির্মাণযজ্ঞ দেখতে প্রতিদিনই রূপসার দুইপাড়ে অসংখ্য মানুষ নিয়মিত ভিড় করছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন চালু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
খুলনার বটিয়াঘাটার বাসিন্দা শিল্পপতি শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। রূপসা রেলসেতু নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই রেলপথ দিয়ে মোংলা বন্দরের মালামাল পরিবহন করা হবে। মোংলা থেকে সরাসরি পণ্য নিয়ে ট্রেন যাবে ভারত, নেপাল ও ভুটানে। এতে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। বাড়বে সুন্দরবনের পর্যটক। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে প্রথম সুপার স্ট্রাকচারের রেলসেতুর নির্মাণ কাজ। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা যায়, এটি মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের রেল সংযোগ তৈরি করবে। এই রেলসেতুটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বরে প্রকল্পের পরামর্শক হিসাবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন।
খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা। খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং সেতুর জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টাব্র রূপসা নদীর ওপর মূল রেলসেতুর কাজ সম্পন্ন করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোদমে পাইল স্থাপন ও পিলার তৈরির কাজ নিয়ে কর্মযজ্ঞ চলছে বহুল প্রত্যাশিত রূপসা রেলসেতু নির্মাণ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। নির্মাণ কাজ শেষে ২০২২ সালের মধ্যে খুলনা ও মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সারাদেশের রেল যোগাযোগ। সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি দেখানো হচ্ছে ৬৩ শতাংশ। সিঙ্গেল ব্রডগেজের এ সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ৯২৮টি পাইলের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৮৮১টির। পিয়ার ক্যাপ ১৪৪টির মধ্যে ৪৮টির কাজ শেষ হয়েছে। ১৪৩টি স্প্যানের মধ্যে ৩৩টি বসানো হয়েছে। এর মধ্যে খুলনাপাড়ে ৬৯টির মধ্যে ৩১টি হয়েছে। মোংলার দিকে ৬৭টি মধ্যে ২টি হয়েছে। তবে মূল নদীর মধ্যে ৭টির কাজ এখনও শুরু হয়নি। পাইল ক্যাপ হয়েছে ১৪৪টির মধ্যে ১০১টির।
তিনি আরও বলেন, সেতুর পশ্চিমপাড় বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্বপাড় খাড়াবাদ এলাকায় অবিরাম চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। কাঙ্ক্ষিত গতিতেই এগিয়ে চলছে কাজ। দিন যতই যাচ্ছে রূপসার বুকে একের পর এক খুঁটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সেতুর কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
এমআরএম/জেডএস