বেশ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে ঢাকাগামী বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রী সোহানুর রহমান।
শুধু সোহানুরই নয়, পরিবহন শ্রমিকেরা বাস চলাচল বন্ধ রাখায় এমনই ভোগান্তিতে পড়েছেন তার মতো আরও অনেক যাত্রী।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় যাত্রীরা বাস ছাড়ার অপেক্ষায় বসে আছেন। বাস কাউন্টারগুলোও বন্ধ। গাড়ি বন্ধ রেখে অলস সময় কাটাচ্ছেন চালক ও সহকারীরা।
মো. রফিকুল ইসলাম খান, বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। বোনের বিয়েতে ঢাকার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গত সপ্তাহে বাড়ি যান। মঙ্গলবার তার ছুটি শেষ। কিন্তু বাস টার্মিনালে এসে দেখেন কোনো বাস চলাচল করছে না। এতে বেশ বিপাকেই পড়েছেন তিনি।
সকাল ১০টায় টার্মিনালে এসে বিকেল চারটার দিকেও কোনো বাস পাননি তিনি। বাধ্য হয়ে তিনি বিকল্প যানের খোঁজ করছেন। জিজ্ঞাসা করতেই মনের ক্ষোভ ঝাড়লেন, ‘আমরা কী? মাঝে মাঝে বুঝি না। মনে হয় আমরা পরিবহন ব্যবসায়ীদের হাতের পুতুল। আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নাই। ’
তার সঙ্গে সুর মেলালেন কলেজছাত্র সোহানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এদের (পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আচরণ এমন হয়েছে। তাদের আচরণে মনে হয় যেন এরা সরকারের থেকেও বড়!’
মঙ্গলবার সকাল থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবিতে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন চালক শ্রমিকরা। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মাসকান্দা থেকে সকালে চার থেকে পাঁচটি বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেলে গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। এরপর থেকে চালক ও শ্রমিকরা দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। তবে অভ্যন্তরীণ সড়কে বাসসহ অন্যান্য যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দীর্ঘক্ষণ বাস কাউন্টারে অপেক্ষার পর অনেক যাত্রীকে ফিরে যেতেও হয়েছে। আবার অনেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে ছুটেছেন বিকল্প উপায়। এদিকে, এ ঘটনায় বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে ঢাকাগামী ট্রেনগুলোতে।
ময়মনসিংহের পরিবহন শ্রমিকদের এমন অবস্থানের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আবদুল আলীম। শম্ভুগঞ্জের এই যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঢাকা যাইতে চাইছিলাম। কিন্তু বাস চলে না। তাই আইজ আর যাই নাই। বাড়ি যাইতাছি গা।
সাভারের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত আরিফুল ইসলাম বলেন, আমার ছুটি শেষ। বুধবার থেকে অফিসে যেতে হবে। কিন্তু বাস চলে না। এরপরও যেতেই হবে। তাই বাধ্য হয়ে ট্রেনের যাওয়ার জন্য স্টেশনের দিকে যাচ্ছি।
এদিকে, শ্রমিকরা বলছেন, তাদের দাবি নতুন সড়ক আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অবস্থানরত ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের চালক মোহাম্মদ শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘নতুন সড়ক আইন আমগর গলাত ফাঁস। আইন আগের লাহান না করলে বাস চালামু না, না খাইয়া থাকমু। জরিমানার এতো টেহা দিমু কইত্যে (কোথায় থেকে)?’
একই পরিবহনের অপর চালক রব্বানী মুর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘সড়ক লইয়া যে আইন হইছে, তাতে কোনো গাড়ির চাকা চলতো না। সরকারের ভাবতে হইবো। আমগরো সঙ্গে লইয়াই সড়ক নিরাপদ করতে অইবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
একে/আরআইএস/এমএ