মানব জীবনে তো বাধা-বিপত্তি আসবেই। কিন্তু থেমে গেলে তো হবে না।
এমনই একজন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম। ১২ বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় ৪৯ বছর বয়সী তৌহিদুল হারিয়েছেন এক হাত। তবুও নিরাশ হননি। বেছে নেননি ভিক্ষাবৃত্তির পথ। জীবন-জীবিকার তাগিদে এক হাতে রিকশা চালিয়েই সংসারের হাল টানছেন তিনি। কারণ তিন ছেলে, দুই মেয়ে আর স্ত্রীর সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিই।
কথা হয় তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে, আরেক মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং দুই ছেলে প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমার হাত নেই তাতে কী হয়েছে? ইচ্ছাশক্তিই বড়। পরিবারের ভরন-পোষণ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি রিকশা চালানোকে।
‘জীবন মানেই বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এই সংগ্রামে সেই টিকে থাকবে ও সফল হবে, যার রয়েছে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং হার না মানার প্রবণতা। ’
তিনি বলেন, প্রতিদিন গ্রাম থেকে শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালাই। এক হাত নেই বলে অনেকে আমার রিকশায় উঠতে চায় না। আবার অনেকে দয়া করে উঠে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা পাই, রাত হলে তাই নিয়ে বাড়ি ফিরি।
‘রাত পোহালেই আবারও এক হাতেই রিকশা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। শহরের এই রাস্তা থেকে ওই রাস্তা, অলিগলিতে রিকশা চালিয়ে জীবনের চাকাটা চালিয়ে নিচ্ছি,’ যোগ করেন তৌহিদুল।
সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, মাঝে-মধ্যে ওই রিকশাচালক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। যদিও গাড়ি কিংবা হেঁটে চলার ইচ্ছে থাকে। কিন্ত পারি না। মায়াবী চেহারা আর পরিশ্রমী ওই মানুষটার কারণে। কোনো কোনো সময় চোখে অশ্রু চলে আসে। তাই দেখা হলেই ওই রিকশাচালক ভাইয়ের সওয়ারি হই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৯
এসএ/