ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতের ফুটপাত

‘বাইছা নিলে ঠকবেন না’

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৯
‘বাইছা নিলে ঠকবেন না’

ঢাকা: চলছে অগ্রহায়ণ মাস। আর মাত্র ২০ দিন পরেই আসবে পৌষ মাস। তাই শীতের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রকৃতি। ভোরের চেয়ে বিকেল-রাতের বাতাস ছড়াচ্ছে হিম অনুভূতি।

প্রকৃতিতে শীতের আয়োজনে সাজছে চারপাশ। ঘরে ঘরে নতুন ধান তোলার আয়োজন গ্রামজুড়ে।

চলছে নবান্নের উৎসব। ভাঁপ ছড়ানো ভাঁপা পিঠার আস্বাদনে তাই তৃপ্তির ঢেকুর উড়ে যাচ্ছে বাতাসে। খেঁজুর রস আর গুড়েও চলছে বাড়তি আয়োজন। ছেলে-পেলের পরীক্ষা শেষে বউ হয়তো বাপের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকেই আবার হাওয়া বদলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশ-বিদেশের ট্যুরে।

এত সব আয়োজনের সঙ্গে বাদ দেওয়ার জো নেই শীত বস্ত্রের। যদিও দেশের কোথাও এখনো শীত জেঁকে বসেনি। তবে আসছে বিধায় এখন থেকেই নামাতে হয়েছে মোটা কাপড়। সেজন্য ব্যস্ত সময় যাচ্ছে ব্যবসায়ীদেরও। শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকান পর্যন্ত চলে এসেছে শীতের কাপড়।

রাজধানীর মিরপুর, মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোটা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ফুল হাতা শার্ট, পলো শার্ট, জ্যাকেট, সুয়েট শার্ট, শাল, চাদর সবই মিলছে। আছে উলের ওড়না, নানা রকম গাউন, পঞ্চসহ মেয়েদের নানা রকম বস্ত্রও। ফুটপাতে ফুটপাতে এখন শীতের পোশাক।  ছবি: বাংলানিউজজ্যাকেট, সুয়েট শার্ট মিলছে ৩৫০ থেকে ২০০০ টাকায়। শার্ট মিলছে ১০০ থেকে ৬০০ টাকায়। শাল-চাদর মিলছে ১৫০ থেকে ২০০০ টাকায়। ওড়নার দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫০-২৫০, গাউন ৫০০ থেকে ২০০০, পঞ্চ ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এসবের মধ্যে নিম্নমান থেকে উচ্চমানের সব ধরনের পণ্যই রয়েছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থাইল্যান্ড, চীন কিংবা ভারতের কলকাতা থেকে আমদানি করা তৈরি পোশাক যেমন রয়েছে তাদের কাছে, তেমনি রয়েছে দেশি গার্মেন্টেসের ‘লট’র বস্ত্রও। রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কপি করা পণ্যও।

মিরপুর-১০ নম্বরে প্রতি বছর শীতের মৌসুমে কাপড়ের পসরা নিয়ে বসেন বিল্লাল হোসেন। অনার্স শেষ বর্ষের এই শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী জানান, এক মৌসুমে যে আয় হয়, তা দিয়েই তার প্রায় পুরো বছরের পড়ার খরচ চলে যায়। তিনি কেবল জ্যাকেট বিক্রি করেন।  

জ্যাকেট প্রতি কত লাভ হয় এটা না বললেও তার বক্তব্যে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের জন্য আশারবাণীই শোনা যায়। তিনি বলেন, ফুটপাতে বেচা-বিক্রি করি বলে এগুলা খারাপ মাল না। বাইছা নিলে ঠকবেন না। শো-রুমের মতো আমরাও ছেমই মাল বেচি। একই মাল ওরা এক-দেড় হাজার টেকা বেশি নেয়। ফুটপাতে ফুটপাতে এখন শীতের পোশাক।  ছবি: বাংলানিউজইকবাল হাসান নামের এক ক্রেতা জানালেন, ফুটপাত থেকে বেশির ভাগ পোশাক কেনা হয় শীত মৌসুমে। কারণ এখানে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির কাপড় হরেক রকম মেলে। একটু দেখে বুঝে নিতে পারলে বেশ ভালোটা নেওয়া যায়। আর দামেও শো-রুমের চেয়ে অনেক কম।

শীতবস্ত্রের ফুটপাতের বাজারে যে ভিড়, তাতে মনে হলো ছোটদের কাপড়ই একটু বেশি চলছে। কারণ, শীত জেঁকে না বসলেও ছোটদের যত্নটাই আগে নিচ্ছেন পিতা-মাতা। মতিঝিলে কথা হয় ফারহানা কবির নামের এক কর্মজীবী মায়ের সঙ্গে। মেয়ের জন্য টুপি, পাজামা, ফ্রক আর জ্যাকেট কিনতে এসেছেন তিনি। ফারহানা বললেন, ফুটপাতে ছোটদের কাপড়ের বৈচিত্র্য বেশ বেশি। কোনো শপিং মলে গেলে এতটা বৈচিত্র্য মেলে না। আর কাপড়ও খারাপ নয়, দামও কম।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজার এখনো জমেনি। একটু একটু বিক্রি বাড়ছে। শীত বাড়লেই বেড়ে যাবে ভিড়। তবে সে সময় বাড়বে দামও। এখন একটু দরদাম করা গেলেও সে সময় আর কোনো সুযোগও থাকবে না।

ছোটদের পোশাক বিক্রেতা আনোয়ার মিয়া বলেন, শীত বাড়লেই কাস্টমারের চাপও বাড়বো। চাহিদা বেশি হইলে দাম বাইড়া যাইবো। মাল বুইঝা একশ থেকে তিনশ ট্যাকা পর্যন্তও বেশি নিমু।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
ইইউডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।