হামলায় জিম্মি থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয় ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জনকে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।
দেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মোট ৮ জন আসামিকে বিচারের জন্য সোপর্দ করা হয়। তারা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন। এর মধ্যে তদন্তকালে গ্রেফতার প্রথম ছয় আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
হামলার পর সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অভিযানে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন নব্য জেএমবির আরও ৮ সদস্য। তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতি) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।
এক বছর বিচারকালে মামলার মোট ২১১ জন সাক্ষীর ১১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১৭ নভেম্বর এই মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
এই মামলায় বিচারে সোপর্দ ৮ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করতে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করা হয়। কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসীদের। তাই এই মামলার রায়ে অভিযুক্ত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আমি আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
কেআই/জেডএস