চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত দুই দশমিক পাঁচ কেজির চেয়ে কম ওজনের বাচ্চা হলে তাকে স্পেশাল যত্নে হাসপাতালে রাখা হয়। আবার এক দশমিক পাঁচ কেজি বা এক কেজির কম হলে সাধারণত বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
এমতাবস্থায় ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি শিশু জীবিত জন্মগ্রহণ করায় বিষয়টিকে অভূতপূর্ব বা মিরাকেল বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, কেরানীগঞ্জের এক মা এই শিশুর জন্ম দিয়েছেন। নবজাতকটি ছেলে। সে আর সব নবজাতকের মতোই ফুটফুটে। তবে নিউমোনিয়া হয় তার।
সম্প্রতি বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটে। পরে এ সম্পর্কে গাইনি বিশেষজ্ঞ ও হাসপাতালটির ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. ওয়াহিদা হাছিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানকার মা ও শিশুর সেবা অনেক বেশি উন্নত। এই হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও অনেক বেশি লক্ষ্য রাখা হয়। সবমিলে আমাদের যত্ন সহকারে চিকিৎসা পরিচালনা, পরিবেশ ও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এই অসাধ্য কাজ আমরা সম্পাদন করতে পেরেছি। অমরা অনেক আগে থেকেই ওই গর্ভবতী মায়ের সেবা সঠিকভাবে পরিচালনা করেছি। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ৮০০ গ্রাম ওজনের শিশুকে বাঁচাতে পেরেছি।
এদিকে, হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রোগীর সেবা দেওয়ায় আন্তরিকতার দিক থেকে হাসপাতালটি আসলেই অনন্য। হাসপাতালের বাহিরে পায়ের জুতা খুলে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয়। ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাসপাতালের সম্পূর্ণ এলাকাতেই বিরাজমান থাকে। এছাড়া রোগীর সেবায় অর্থিকভাবেও ব্যাপক সহায়তা করা হয় এখানে। দরিদ্রদের নিয়মিত বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়াসহ সবসময় একটা না একটা ছাড়ের ব্যবস্থা থাকেই।
আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা বিপদে পড়লে তাদের সহায়তার জন্য কর্মীরা আলাদা একটি ফান্ড তৈরি করে রেখেছেন বলেও জানা গেছে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে। এ ফান্ডের জন্য বছরের ছয়দিনের বেতন দিয়ে দেন হাসপাতালের প্রতিটি কর্মী।
বসুন্ধরা আদ-দ্বীন হাসপাতালে বিনামূল্যে অনেক সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে গর্ভবতী নারীদের টিকার রেজিস্ট্রেশন ফি, শিশুর টিকার রেজিস্ট্রেশন ফি ও ওয়ার্ডের সাধারণ বেডের ভাড়া নেওয়া হয় না। এছাড়া রোগীদের খাবার ফ্রি। সার্ভিস চার্জও নেওয়া হয় না। পাশাপাশি ইনডোর কনসালটেশন বিনামূল্যে হওয়াসহ আরও অনেক সেবা রয়েছে, যেগুলোতে টাকা লাগে না।
এখানে চিকিৎসায় রয়েছে ব্যাপক ছাড়ের ব্যবস্থা। বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছানির অপারেশন বিনামূল্যে হয় হাসপাতালটিতে। এছাড়া এ বছর চোখের ছানিসহ বিভিন্ন ধরনের চক্ষু রোগের অপারেশনে কেবিন ভাড়া ছাড়া আর কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আবার কেবিন ভাড়ায়ও ছিল ছাড়ের ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে হাসপাতালটির সহকারী ব্যবস্থাপক মরিয়ম কাদের বাংলানিউজকে বলেন, চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেই আমাদের জানানো হয়েছিল, এখানে মানবিকতা ও দরদ দিয়ে কাজ করতে হবে। উপার্জনের মনোভাব বাদ দিয়ে সেবায় নিয়োজিত থাকতে হবে। আমাদের এখানে হৃদরোগ ও মানসিক রোগ বিভাগ ছাড়া প্রায় সব ধরনের সেবাই রয়েছে।
হাসপাতালটিতে ভর্তি এক রোগীর স্বামী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার দুই বাচ্চা এই হাসপাতালেই জন্মগ্রহণ করেছে। এখন আরেক বাচ্চাও এখানেই হচ্ছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এখানে রয়েছে। সেবার মানও ভালো।
হাসপাতালটিতে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের কোনো ভিড় দেখা যায়নি। এর ফার্মেসি থেকে জানা যায়, তাদের চাহিদা অনুসারে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন ওষুধ এনে দেয়। এখানে চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই। যা অন্যান্য হাসপাতালে থাকে।
সামগ্রিক বিষয়ে হাসপাতালটির ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. ওয়াহিদা হাছিন বলেন, আমাদের সেবা, যেমন যত্নশীল, তেমন বিস্তৃত। আমাদের এখানে বরিশাল, খুলনা, ঢাকা বিভাগের কেরানীগঞ্জ ও মাওয়া এলাকার রোগী বেশি আসে। এছাড়া পাশের মাওয়া হাইওয়ে যদি কেউ দুর্ঘটনায় পড়েন, তাহলে দ্রুত আমাদের এখানে আসেন। যেখানে আগে রাজধানী শহরের হাসপাতালগুলোর ওপরে নির্ভর করতে হতো।
তিনি বলেন, আমরা হৃদরোগ ও মানসিক রোগ ছাড়া সব ধরনের সার্জারি ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। তবে এসবেরও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে উন্নতমানের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাপনা।
তবে হাসপাতালটিতে দালালের অপচেষ্টা রয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, সম্প্রতি কয়েকটি মহল এই হাসপাতালের সামনে দালাল নিয়োজিত করেছে। যারা কি-না রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
এমএএম/টিএ