ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নীলফামারীতে জেঁকে বসেছে শীত, নাকাল মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯
নীলফামারীতে জেঁকে বসেছে শীত, নাকাল মানুষ হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি ও আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নীলফামারীর ডোমার ও ডিমলা উপজেলা বেশি দূরে নয়। তাই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বা ঠাণ্ডা পড়তে দেরি হলেও নীলফামারী জেলার সর্বশেষ উপজেলা ডোমারে শীতের দাপট এক মাস আগে থেকেই শুরু হয়েছে। 

ওই এলাকা দু’টি হিমলায়ের কাছাকাছি হওয়ায় সন্ধ্যা নামতে না নামতেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় চারপাশ। সন্ধ্যার পর থেকে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করতে হচ্ছে।

বিপাকে পড়ে যায় হাট-বাজারের লোকজনের। শীতের কাপড় ছাড়া চলাই যেন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শিশু থেকে বয়স্কদের দুরাবস্থা চোখে পড়ার মতো।

ডিমলার গ্রামে গঞ্জে বাড়ির উঠানে আগুন পোহানোর মেলা বসে যায়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা লেপ তোষক কিনে শীত নিবারণ করছে। আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা পথ চেয়ে বসে থাকে সামর্থ্যবান মানুষগুলোর দিকে অথবা বেসরকারি দাতা সংস্থার দিকে। কখন একটি কম্বল দেবে।
  
ডোমার উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নের উত্তর আমবাড়ী গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলেফা বেগম (৫৫) বলেন, গতবারতো একখান কম্বল দিছিল। পাতলা কম্বলখান ছিঁড়ি গেইছে। এবার আশায় আছো কাহো যদি একনা কম্বল দেয়। তাহলে এবার শীতখান কোনো রকমে কাটেবার পাইম।

একই এলাকার মাঝা পাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেন (৬৫) বলেন, এলাইতে যে শীত পইছে, হামার মরণ ছাড়া উপায় নাই বাহে। প্যাটোত ভাতে জুটে না আর গরম কাপড় নাগাইছেন। কাহো যদি দয়া করি একখান কম্বল দেয় ঠাণ্ডাখান কাটিবার পারিম। মোরতো কাহো নাই যে কম্বল কিনি দেবে। কপাল পোড়া মোর ব্যাটার ঘরতো দেখিও দ্যাখে না।

প্রচণ্ড এই শীতে শিশুসহ বৃদ্ধদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, বমি যেন লেগেই আছে। বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বাত ব্যথাসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে।

নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মনিরুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, এই ঠাণ্ডায় শিশু ও বৃদ্ধদের অবশ্যই ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। গরম পানি ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। গরম কাপড় ব্যবহার করাতে হবে। অপরদিকে, বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের রোগ নিরাময়ের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।  

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এনামুল হক বলেন, শিশু ও বৃদ্ধদের সামান্যতম সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় হাসপাতাল অথবা কমিউনিটি ক্লিনিকে পরামর্শ নিতে হবে। কোনোভাবেই অবহেলা করা চলবে না।  

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুফল চন্দ্র গোলদার জানান, জেলায় মোট শীতবস্ত্র শিশুদেরসহ পাওয়া গিয়েছে ৩৫ হাজার ৪৩৯টি। এর মধ্যে জেলা ত্রাণ ভাণ্ডারে এসে পৌঁছেছে ২২ হাজার ৬৩৯ পিস। বাকি ১২ হাজার আটশ’ পিস শীতবস্ত্র দ্রুত এসে যাবে।
 
তিনি বলেন, সেগুলি সরাসরি উপজেলা ওয়ারি বন্টন করা হয়েছে। জেলায় শীতের প্রকোপ দেখা দিলেও আশা করছি, শীতবস্ত্রের অভাবে গরিব দুঃখি মানুষ কষ্ট পাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।