নিখোঁজ জিসানের বড় ভাই মো. শোয়েব আহমেদ জানান, গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর আশুলিয়া থেকে বাংলা ক্যাট কোম্পানির দুই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (প্রকৌশলী) জিসান ও তার সহকর্মী লিখন ব্যক্তিগতভাবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রাজাপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভেকু মেরামতের কাজে যান। কাজ শেষে রাত সাড়ে ১২টায় ফতুল্লা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে জিসান তার স্ত্রীকে ফোন করে জানান।
পরে বাংলা ক্যাট কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করলে তারা বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের মালিক সজীবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সজীব জানান, রাত সাড়ে ৩টার দিকে তার কর্মচারী পায়েল ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে দু’জনকে বুড়িগঙ্গা নদী পার করে দেওয়ার সময় একটি জাহাজ কাছাকাছি এসে পড়লে ট্রলারের চালকসহ জিসান ও লিখন নদীতে ঝাঁপ দেন। ভোরে ট্রলার চালক পায়েল সাঁতরে ফিরে এলেও জিসান ও লিখন নিখোঁজ থাকেন।
তবে নিখোঁজ জিসান ও লিখনের স্বজনদের অভিযোগ, বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের মালিক সজীব পুরো বিষয়টি একদিন গোপন রাখেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেন। যার কারণে নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
এদিকে, গত ৬ জানুয়ারি রাতে জিসানের পরিবার ফতুল্লা থানায় গিয়ে বিষয়টি অবগত করে জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা না করে জিডি গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগে রয়েছে। যার কারণে বাধ্য হয়ে গত ৭ জানুয়ারি আশুলিয়া থানায় জিডি করেন তারা।
দুইদিন পর বিষয়টি জানতে পেরে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ও নৌ-পুলিশ নদীতে তল্লাশি চালিয়েও নিখোঁজদের কোনো হদিস পায়নি। এ অবস্থায় গত তিনদিন ধরে দুই পরিবারের স্বজনরা সহযোগিতার আশায় ফতুল্লা থানাসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। থানা পুলিশ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় জিসানের পরিবার গত ৮ জানুয়ারি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে লিখিত আবেদনও করেন। সন্দেহের সুরাহা করতে সজীব ও তার কর্মচারী পায়েলকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি করছেন তারা।
এদিকে, নিখোঁজদের সন্ধানে সবধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান বাংলা ক্যাট কোম্পানির প্রশাসনিক কর্মকর্তা (হেড অব সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি) আশিক মাহমুদ।
তিনি বলেন, নিখোঁজ দুই প্রকৌশলী আমাদের কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের সন্ধানে আমরা থানা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ডসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করেছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তারপরেও কোম্পানির পক্ষ থেকেও আমরা সবধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জেলা উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, ঘটনার দুইদিন পর আমরা খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে অবগত করলে আমরা তাৎক্ষণিক ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি করতে পারতাম। আমরা দুইদিন পর জানতে পেরে ঘটনাস্থলের সম্ভাব্য চার কিলোমিটার এলাকা খুঁজে দেখেছি। তবে ডুবন্ত কোনো মানুষের আলামত পাইনি।
তিনি বলেন, নদীতে ডুবে গিয়ে থাকলে দুইদিনের মধ্যেই ভেসে উঠার কথা। চারদিনেও ভেসে না ওঠায় আসলেই কী তারা নদীতে ডুবে গেছে কিনা সেই ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও আমরা ডুবুরি নামিয়ে আবারও তল্লাশি চালাবো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা বিভিন্নভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের মালিক সজীব ও তার কর্মচারী ট্রলার চালক পায়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
আরবি/