ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৭২০ জন কর্মজীবী নারীর সিটে থাকেন ৮৫ জন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২০
৭২০ জন কর্মজীবী নারীর সিটে থাকেন ৮৫ জন!

সাভার (ঢাকা): বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে আসছে। তাই কর্মজীবী নারীদের জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থাও জরুরি। এ কারণে কর্মজীবী নারীদের জন্য দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কয়েকটি নারী হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে শুধু কর্মজীবী নারীরাই থাকবেন।

২০১৭ সালের শেষের দিকে নারী পোশাক শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাভারের আশুলিয়ায় এমনই একটি গার্মেন্টস কর্মজীবী নারীদের জন্য ৭২০ সিট বিশিষ্ট ১২তলা আবাসন ভবন করছিল সরকার। যেন এখানে কর্মজীবী পোশাক শ্রমিকরা নিরাপদভাবে থাকতে পারেন।

কিন্তু কোনো এক কারণে ৭২০ জন কর্মজীবী নারীর জায়গায় এখন মাত্র ৮৫ জন নারী ভবনটিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ ভাগই কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১২তলা বিশিষ্ট ভবনের হোস্টেলটিতে একটি লিফট রয়েছে যা চালু রয়েছে। হোস্টেলটির দ্বিতীয়তলায় প্রশাসনিক অফিস ও নিচতলায় একটি ডাইনিং হল রয়েছে, ডাইনিং হলে এক সঙ্গে ৫০ জনের খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। হোস্টেলটির তৃতীয়তলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত দুইটি করে রুম রয়েছে, দুইটি রুমে একটিতে ৬২ জন অন্য রুমে ১৮ জন করে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া হোস্টেলটিতে ৭২০ জন থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে আছে ৮৫ জন।

সরেজমিনে আশুলিয়া-সিঅ্যান্ডবি সড়কের আশুলিয়ার খেঁজুরবাগানে অবস্থিত গার্মেন্টস কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ঘেঁষে সাদা-কালো রং গায়ে নিয়ে পরিচ্ছন্ন-পরিষ্কার একটি ১২ তলা ভবন দাঁড়িয়ে আছে। ভবনটিতে চার তলা পর্যন্ত মানুষের বসবাস লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বাকি তলাগুলো খালি পড়ে আছে।  

গার্মেন্টস কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল।  ছবি: বাংলানিউজ

হোস্টেলের দ্বায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোস্টেল সুপার আছেন কিন্তু সহকারী হোস্টেল সুপার নেই। ডাক্তার ও স্টোর কিপার থাকার কথা থাকলেও তারাও নেই। এছাড়া একজন মেট্রোন, একজন অ্যাকাউন্ট, একজন ক্যাশিয়ার, একজন কম্পিউটার অপারেটর, নয়জন অফিস সহায়ক, চারজন নিরাপত্তাকর্মী, তিনজন আয়া, তিনজন ক্লিনার, একজন লিফট ম্যান, একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান ও একজন মালি দিয়ে চলছে পুরো এই হোস্টেলটি।

আরও জানা গেছে, হোস্টেলটির প্রতিটি সিটের ভাড়া ৫০০ টাকা। খবার খরচ প্রতিজনের ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। এখানে ভর্তি হতে হলে ১০০ টাকা দিয়ে একটি ফর্ম কিনে পরে একমাসের সিট ভাড়া ৫০০ টাকা অগ্রিম দিতে হয়।

হোস্টেলটির তিনতলায় থাকেন তাহমিনা নামের একজন শ্রমিক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কর্মজীবী নারীরা এই হোস্টেলে নিজেদের নিরাপদ মনে করে না। গার্মেন্টস কর্মজীবী মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ নারী তাদের কর্মস্থলের আশেপাশের বাসা বাড়িতে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করে থাকে। অবিবাহিত কর্মজীবী মেয়েদের ক্ষেত্রে তাদের বাবা-মা সঙ্গে থাকে। বিবাহিতরা তাদের স্বামী সন্তান নিয়ে থাকে। তাই এই হোস্টেলে কর্মজীবী নারীরা কম থাকে।

আঁখি নামে আরেক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, পোশাক শ্রমিকরা থাকতো যদি তাদের নিজেদের রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতো। হোস্টেলটিতে কোনো চুলা তো দূরের কথা পানি গরম করার ব্যবস্থা নেই। এখানে থাকতে হলে হোস্টেলের খাবারই খেতে হবে। এছাড়া বাইরের কোনো খাবার খাওয়া যাবে না।

মেরিনা এখানে থাকেন পাঁচ মাস ধরে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানে বেশিরভাগ মেয়েই কোনো না কোনো ইউনিভার্সিটির। আর এখানকার ফ্লোরগুলো ব্যারাকের মতো। এক ফ্লোরে ৫০/৬০ জন করে থাকতে হয়। প্রতিদিনই কারো না কারো কিছু এখান থেকে হারিয়ে যায়। এখানে প্রতিটা মেয়ের জন্য একটি একটি করে ক্যাবিনের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো।

এ বিষয়ে হোস্টেলটির সুপার শাহিদা আক্তারে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির কয়েকটা মেয়ে রয়েছে। তবে আপনারা জানেন এই ভবনটি আসলে গার্মেন্টসের মেয়েদের জন্য। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত সিট আছে তাই কিছু ভার্সিটির মেয়েদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। পেশাক শ্রমিকদের না পাওয়ায় তাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে।

কেন পোশাক শ্রমিকরা এখানে থাকতে চান না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ভবনটির ভেতরে ব্যারাক সিস্টেম হয়ে গেছে। একটি রুমে ৬২ জন করে থাকতে হবে। মেয়েরা এমনিতেই একটু প্রাইভেসি খোঁজে, তাই এখানে মেয়েরা থাকে না। এছাড়া এই হোস্টেলটির প্রচার না থাকায় পোশাক শ্রমিকরা জানতেও পারছে না এখানে তাদের জন্য এমন সুবিধা রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে আমাদের মন্ত্রণালয় সব বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ভবনটি কর্মজীবী মহিলায় পুরোপুরিভাবে ভরে উঠবে।

বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা হলে শ্রমিক নেতা মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, আসলে পোশাক শ্রমিকরা পরিবার বা স্বজনদের সঙ্গে থাকলে তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করেন। হোস্টেলে খাওয়া-দাওয়া খরচ একটু বেশি। আর এই ভবনটি করা হয়েছে গার্মেন্টস জোনের বাইরে। গার্মেন্টস জোন হচ্ছে জামগাড়া-অশুলিয়া। সেখানে ভবনটি করা হলে আরও নারী শ্রমিক বাড়তি হতো। এছাড়া অনেক শ্রমিকই হোস্টেল সম্পর্কে জানে না। হোস্টেলটির সব সমস্যার সমাধান করা হলে অবশ্যই শ্রমিকরা থাকবে।

সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, হোস্টেলটিতে দীর্ঘদিন ধরেই সিটের ব্যাপারে একটি অভিযোগে রয়েছে নারী শ্রমিকদের। কারণ নারী শ্রমিকরা সবাই সঙ্ঘবদ্ধভাবে এক সঙ্গে এক কক্ষে থাকতে চান না। বিষয়টি আমলে নিয়ে হোস্টেলের ভেতরে প্রত্যেক নারীর জন্য আলাদা আলাদা ক্যাবিন করে দেওয়ার কাজ চলমান। আশা করি, তাড়াতাড়ি এই কার্যক্রম শেষ হলে নারী শ্রমিকরা নিরাপদভাবে এখানে থাকতে পারবে ও তাদের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।