সিআইডি জানায়, গত সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সূত্র ধরে এনামুল ও রূপনের পুরান ঢাকার বাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে র্যাব। সে সময় তারা ঢাকা থেকে পালিয়ে কক্সবাজার চলে যায়।
পালাতে ব্যর্থ হয়ে বেনামি পাসপোর্ট বানিয়ে ভারত হয়ে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সেজন্য কেরানীগঞ্জে এক সহযোগীর বাড়িতে পালিয়ে অবস্থান করছিলেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ভোরে কেরানীগঞ্জের একটি বাড়ি থেকে এনামুল ও রূপনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও অর্থ জব্দের ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা ৯টি মামলার তদন্ত ভার পায় সিআইডি। এর মধ্যে চারটি মামলার এজাহারে এই দুই ভাইয়ের নাম রয়েছে। তদন্তের ধারাবাহিকতায় তাদেরকে কেরানীগঞ্জের এক সহযোগীর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্ত ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সম্পত্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই দুইজনের মোট ২২টি জমি ও বাড়ি রয়েছে যার অধিকাংশই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। এছাড়াও সারাদেশে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় তাদের ৯১টি অ্যাকাউন্টে মোট ১৯ কোটি টাকা জমা রয়েছে এবং ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে পাঁচটি।
দুই ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে র্যাব। আমরা জানতে পেরেছি, সেগুলো ছিলো কালোটাকা একং দেশের বাইরে পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিল। তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গত সেপ্টেম্বরে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় তারা পালিয়ে কক্সবাজার চলে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো বোটে অবৈধভাবে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাওয়া।
তবে সেখানে যেতে ব্যর্থ হয়ে নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। এজন্য তারা ঢাকায় এসে কেরানীগঞ্জে মোস্তফা নামের এক সহযোগীর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। বেনামি পাসপোর্ট তৈরি করে ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
বেনামি পাসপোর্ট ও ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার জন্য মোট ৪০ লাখ টাকা সঙ্গে রেখেছিলেন বলেও জানান তিনি।
তদন্তের ভিত্তিতে তিনি আরও বলেন, আমরা জেনেছি এই দুইজনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ক্যাসিনো ব্যবসার শুরু হয়। নেপালিদের মাধ্যমে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম বাংলাদেশে এনেছেন তারা। এনামুল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসার পরিচালক ছিলেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও স্বর্ণ জব্দ করে র্যাব-৩।
সে সময় র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল, এনামুল হক ওরফে এনু ও রূপন ভূঁইয়া ক্যাসিনোর শেয়ারহোল্ডার। ক্যাসিনোর লাভের টাকা তারা বাসায় নিয়ে রাখতেন। নগদ টাকা রাখলে অনেক জায়গার প্রয়োজন হয় তাই তারা টাকা দিয়ে স্বর্ণ কিনে রাখতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২০
পিএম/এমএমআই/জেডএস