শনিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে তারা ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা। ট্যুর জিও-তে মোট ১০ জনের তালিকা ছিল।
জানা যায়, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় এটি দ্বিতীয় ভ্রমণ। যারা কোচ এবং কারখানা দেখতে গেছেন তাদের মধ্যে আছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের ব্যক্তিগত টাইপিস্ট মো. মোহাম্মদ মাফাকহারুল ইসলাম ভ্রমণ বাতিল করেছেন। এর আগেও ৯ জন একই প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করেন।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পটি শুরু হয়। ২০১৯ সালের ৬ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
এসব ট্যুর প্রকল্পের শুরুতে হয়। কিন্তু এই প্রকল্পের শুরুতে এবং শেষে দু’বার কেন ভ্রমণ সে বিষয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
জানা যায়, কোচ ও কারখানা পরিদর্শনের টিমে রয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব অমল কৃষ্ণা মণ্ডল, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (উন্নয়ন) মো. জর্জিসুর রহমান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান মুখলেছুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ রেলওয়ের চিফ পারসোনাল অফিসার (পশ্চিম) কাজী মোহাম্মদ সেলিম, পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সহকারী প্রধান (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) মো. সালাহ উদ্দিন ও সরকারি অন্য অফিসের আরো দুই কর্মকর্তা।
জিও-তে ১০ নম্বর তালিকায় ছিলেন মোহাম্মদ মাফাকহারুল ইসলাম। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি স্ট্যাডি ট্যুর বাতিল করেন। ট্যুর বাতিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জমাদার মোহাম্মদ মাফাকহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত কারণে ইন্দোনেশিয়া যাইনি।
দেশে এখন পর্যন্ত ১১৪টি কোচ এসেছে। বাকি আছে আরো ৮৬টি। এসব দেখতেই মূলত ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়া হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্ট্যাডি ট্যুর ও পরিদর্শন প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় ৯ জন ইন্দোনেশিয়ায় যাচ্ছি। কেমন পরিবেশে কোচ তৈরি হচ্ছে, কারখানার সক্ষমতা ইত্যাদি দেখতে যাচ্ছি।
শেষ সময়ে ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১১৪টি কোচ দেশে এসেছে, আরো ৮৬টি কোচ বাকি আছে।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেলওয়েকে এগিয়ে নিতে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন নতুন ২০০ যাত্রী কোচ আনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মিটারগেজ লাইনে চলার উপযোগী এসব কোচ ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে। স্থলপথে নাগরিকদের দেশের বিভিন্নস্থানে নিরাপদ, আরামদায়ক, সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব রেলসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এসব কোচ আনা হচ্ছে।
প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন রুটে নতুন ট্রেনে এসব কোচ সংযোজন করা হবে। এছাড়া পুরাতন ট্রেনেও এসব কোচ সংযোজন করে ট্রেনের যাত্রীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে মোট নয় ধাপে ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০০টি মিটারগেজ কোচ বাংলাদেশে আনা হচ্ছে।
সবশেষে ধাপে ২০২০ সালের জুলাই মাস নাগাদ সব কোচ বাংলাদেশ এসে পৌঁছাবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ২০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ যাত্রী পরিবহন কোচ সংগ্রহ নামে এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে এডিবি দিচ্ছে ১ হাজার কোটি ৮ লাখ টাকা। বাকি ৩৭৪ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে।
রেলের প্রকল্প সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা প্রতিটি মিটারগেজ কোচের মূল্য ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা এবং প্রতিটি ব্রডগেজ কোচের মূল্য ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। আমদানি করা মিটারগেজ কোচের ১৮টি এসি বার্থ বা প্রথম শ্রেণির এসি কোচ থাকবে ১০টি। ৫৫ সিটবিশিষ্ট এসি চেয়ার কোচ থাকবে ৪০টি। ৬০ সিটবিশিষ্ট শোভন চেয়ার কোচ থাকবে ১১২টি। ১৫ সিটবিশিষ্ট খাবার গাড়ি ও গার্ড ব্রেকসহ কোচ থাকবে ২৫টি। পাওয়ার কার ও নামাজ ঘরসহ কোচ থাকবে ১৩টি। দেশে এই প্রকল্পের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো স্টেনলেস স্টিলের বডি ও বায়ো টয়লেটযুক্ত কোচ আনছে রেল কর্তৃপক্ষ। ভেতরে কোচের আয়তনও বর্তমান ট্রেনের চেয়ে বেশি বলে যাত্রীরা অধিক স্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবেন। একই সঙ্গে এসব ট্রেন সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক তথা যাত্রীবান্ধব বলে দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২০
এমআইএস/এএ