এদিকে, সাংবাদিক মানিক সাহা মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাবের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে মাল্যদান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নও (কেইউজে) নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
২০০৪ সালের ১৪ জানুয়ারি খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মহানগর ও জেলা কমিটির সম্মেলন থেকে প্রেসক্লাবে যান একজনের সঙ্গে দেখা করতে। কথা শেষ করে তিনি রিকশায় করে আহসান আহমেদ রোডের বাড়িতে যাওয়ার সময় প্রেসক্লাবের অদূরে চরমপন্থিদের বোমা হামলায় নিহত হন।
রায় ঘোষণাকালে বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এম এ রব হাওলাদার তার পর্যবেক্ষণে বলেন, তদন্তে দুর্বলতার পাশাপাশি যথাযথ সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। সাক্ষ্য যথাযথ না পাওয়ায় অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া গেলো না।
এতে ১১ আসামির মধ্যে ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেওয়া হয়। হত্যা মামলায় এসব আসামিদের সাজা হলেও বিস্ফোরক মামলায় কোনো আসামিকে সাজা দেওয়া যায়নি। হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয় অতি দ্রুততার সঙ্গে ২০০৪ সালের ২০ জুন।
এ সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক কাজী আতাউর রহমান এবং খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশারফ হোসেন। আসামি ছিলেন ১৩ জন।
একই আসামিদের অভিযুক্ত করে বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় বেশ পরে ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।
পরে হত্যা মামলাটির অধিকতর তদন্ত হয়। এ অধিকতর তদন্তে সম্পূরক চার্জশিট জমা পড়ে ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন পাল। তিনি আরও একজন আসামি যোগ করেন। মোট আসামি হয় ১৪ জন। বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই আসামিদের মধ্যে তিনজন কথিত ক্রসফায়ারে মারা পড়ে। ১১ আসামি নিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
মানিক সাহার ঘনিষ্ট সহকর্মী খুলনার প্রবীণ সাংবাদিক অমিয় কান্তি পাল বলেন, আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা আশা করেছিলেন। কিন্তু তা না হয়ে ২০১৬ এ হত্যা মামলায় ৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে খুলনার দ্রুত বিচারিক আদালত। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতাদের সাজা হয়নি। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। নির্ভীক সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতাসহ নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে পুনঃতদন্ত করা প্রয়োজন। মানিক সাহার শারীরিক মৃত্যু হলেও শত্রুরা তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। কর্মগুণে অনন্তকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তিনি।
২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হন সাংবাদিক মানিক সাহা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খুলনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানিক সাহা মৃত্যুর আগে বিবিসি, দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন এবং নিউএজ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত মানিক সাহা ছাত্রজীবন থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
এমআরএম/ওএইচ/