এদিকে শরিয়ত কারাগারে গেলেও গ্রামে তার পরিবারের লোকজন রয়েছে নিরাপত্তাহীনতায়। ছোট তিন সন্তানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আগধল্লা গ্রামের বাউল শরিয়ত বয়াতি (৩৫) গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাই উপজেলার একটি বাউল গানের আসরে যান। সেখানে পালা গানে বলেন, ‘গান বাজনা হারাম কোরআনে কোথাও এ কথা বলা নাই। কেউ যদি হারাম প্রমাণ দিতে পারেন তবে তাকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে চ্যালেঞ্জ দিলাম’। এছাড়াও ইসলাম ও কোরআন হাদিস নিয়ে কিছু কথা বলেন। ইউটিউবে তার এ বক্তব্য নিজ গ্রামের কিছু মানুষ দেখে। তারা এলাকার লোকজন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে বলে অভিযোগ এনে বিচারের দাবিতে এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন।
এর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি আগধল্লা গ্রামের মাওলানা মো. ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে শরিয়তের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকরা মামলায় শরিয়তের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধের উপর আঘাতের অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় গত শনিবার পুলিশ শরিয়তকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেফতার করে। ওইদিনই তাকে টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মামলায় বাদী শরিয়তের বিরুদ্ধে যে কথা গুলো বলার অভিযোগ আনা হয়েছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে শরিয়ত তা বলেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোসহ সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্যে এসব বক্তব্য দিয়েছেন কিনা সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
মঙ্গলবার রিমান্ড শেষে শরিয়তকে টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানো আদেশ দেন।
শরিয়তের আইনজীবী জিনিয়া বখশ জানান, তারা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শরিয়তের জামিনের আবেদন করেছেন।
এদিকে শরিয়তকে আদালতে হাজির করা হবে এ খবর পেয়ে প্রায় শতাধিক বাউল এবং শরিয়তে আত্মীয় স্বজন আদালত এলাকায় ভিড় করে। সেখানে শরিয়তের ভাই মারফত আলী জানান, প্রতিবছর তাদের বাড়িতে বাউল গানের আসর হয়। এ গান বন্ধ করার জন্য মামলার বাদী মাওলানা ফরিদুল ইসলাম এলাকা কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক বছর ধরে হুমকি দিচ্ছে। তারা চাঁদাও চেয়েছিল।
শরিয়তের স্ত্রী শিরিন বেগম জানান, তারা সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যে চক্রটি শরিয়তের বিরুদ্ধে নানা অপ্রচার ও মামলা করেছে তারা তাদের (শিরিনদের) হুমকি দিচ্ছে। তার ছেলে সাদিকুল ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট দু-মেয়ে পড়ে প্রথম শ্রেণীতে। হুমকির মুখে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতেও পারছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
এসএইচ