মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং জেলা শিশু আদালতে পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
সাক্ষ্যগগ্রহণ চলাকালীন ডিগ্রি ১ম বর্ষের পরীক্ষা থাকায় আদালতের অনুমতি নিয়ে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এবং কারাগারে একই পরীক্ষায় অংশ নেন আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন ও মো. সাগর।
এদিকে রিফাত হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিল কেন হবে না, এ মর্মে বুধবার আদালতের শোকজের জবাব দেবেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। জবাবের পর মিন্নির জামিন বাতিলেরর আবেদনের বিষয়ে আদেশ প্রদান করবেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। এসময় আদালতের বিচারক নিহত রিফাতের চাচা আবদুল আজিজ শরীফ, লতিফ শরীফসহ অপর এক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তিনজন সাক্ষীকেই জেরা করেন আসামি পক্ষের ১০ আইনজীবী।
দুপুর দুইটার দিকে বরগুনার শিশু আদালতে রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। নিহত রিফাতের মা ডেইজি বেগম এবং চাচাতো বোন নুসরাত জাহান অনন্যার সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেন বিচারক মো. হাফিজুর রহমান।
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ছেলে হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার আদালতে ভেঙে পড়েন ডেইজি বেগম। পরে তাদেরও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম মজিবুল হক কিসলু বাংলানিউজকে জানান, এ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে নিহত রিফাতের দুই চাচাসহ তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া এ মামলার ১৪ শিশু আসামির বিরুদ্ধে নিহত রিফাতের মা ও চাচাতো বোন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে আর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো জানান, বুধবার এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে তিনজন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে দুজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করবেন।
মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বাংলানিউজকে জানান, বুধবার মিন্নির জামিন বাতিলের বিষয়ে আদালতের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব উপস্থাপন করবো। আশা করি আমাদের উত্তর পেয়ে আদালত মিন্নির জামিন বহাল রাখবেন। এজন্য আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড ঘটে। গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক- এ দু ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক রয়েছেন। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি প্রিন্স মোল্লা উচ্চ আদালতের আদেশে এবং বরগুনার শিশু আদালতের আদেশে মারুফ মল্লিক এবং আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ জামিনে রয়েছেন। আর বাকি আসামিরা কারাগারে।
১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। অন্যদিকে গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
এসএইচ