বুধবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিরোধীদলের সংসদ সদস্য (এমপি) ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, যে মানুষগুলোর জন্য আমার পিতা জীবন দিয়ে গেছেন, সেই মানুষগুলোর জন্য কতটুকু করতে পেরেছি, আমি শুধু সেই হিসাবটুকু দেখি। এখানে আমার আমিত্ব বলে কিছু নেই। আমার কোনো চিন্তাও নেই। আমি চিন্তা করিও না।
‘সেই ছোটবেলায় আমি যেভাবে আপনজন হারিয়েছি। নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়েছে। বারবার পিতাকে জেলে যেতে দেখেছি। কখনো জেলে, কখনো ঘরে। মা সারাক্ষণ ব্যস্ত। স্কুল-কলেজে পড়তে গিয়ে বাধার সম্মুখীন। একটা কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে গেলে সেই দেশের সরকার যদি বাধা দেয়, তাহলে আমরা কিসের মধ্য দিয়ে চলেছি, সেটা হয়তো অনেকেই চিন্তাও করতে পারবেন না। ’
‘আজ বিশ্বের অনেকের সঙ্গে আমায় যখন তুলনা করা হয়, কিন্তু তাদের এত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে হয়নি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার মৃত্যুকে সম্মুখ থেকে দেখেছি। কিন্তু কখনো পিছিয়ে যাইনি। চলার পথে যত বাধা এসেছে অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। সামনে একটাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে। এই বাংলাদেশকে, যে বাংলাদেশকে আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। সেই বাংলাদেশকে স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে হবে।
‘বাংলাদেশের যে মানুষগুলো দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে, একবেলা খেতে পারে না, চিকিৎসা পায় না, শিক্ষা পায় না, তাদের জীবনকে পরিবর্তন করতে হবে। তাদের জীবনকে উন্নত করতে হবে। তাদের জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়তে হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা যে স্বপ্নটাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেই স্বপ্নটাকে বাস্তবায়ন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। এর বেশি আর কোনো চিন্তা কিন্তু আমার নেই। আমি চলি- একটি আদর্শ, একটি স্বপ্ন কীভাবে বাস্তবায়ন করবো তা নিয়ে। যে মানুষ একটি জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, তার স্বপ্ন যেন বৃথা না যায়।
‘যে লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন- এদেশের স্বাধীনতার জন্য। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন তাদের কষ্ট যেন বৃথা না যায়। বাংলাদেশ যেন সফল হয়। সারাবিশ্বে একটি মর্যাদা নিয়ে চলে। বাঙালি জাতি যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে- সেই প্রচেষ্টাটা করে যাওয়া আমার একমাত্র লক্ষ্য। ’
শহীদুজ্জামান সরকারে প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য। দারিদ্র্য, নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য স্কুলজীবন থেকেই সংগ্রাম শুরু করেন। তার ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করে স্বাধীনতা পেয়েছি, একটি জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি।
‘তার একটি স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাকে তিনি গড়ে তুলবেন। কিন্তু সেটা তিনি করে যেতে পারেননি। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন, একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে যখন তাকে এই বাংলার মাটিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হল, তারপর থেকেই তার নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যে, এই নামটা বোধ হয় আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। ’
তিনি বলেন, আপনারা জানেন- আমি এবং আমার ছোট বোন ছাড়া পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জেলখানায় জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করা হয়। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ বুঝি আর কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর এই নামও আসবে না। কাজেই জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন তো অনেক দূরের কথা ছিল। কিন্তু আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। কৃতজ্ঞতা জানাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে। তিনি আমাদের সেই শক্তিটা দিয়েছেন। সেই সুযোগটা দিয়েছেন। কাজেই আমি শুকরিয়া আদায় করি যে, বিদেশে ছয়বছর থাকার পর একবুক ভরা স্বজনহারার বেদনা নিয়ে বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলাম।
‘একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, যে স্বপ্ন দেখেছেন বাংলাদেশের মানুষের সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য, সেই সুন্দর জীবন দেওয়াটাই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। সরকার গঠন করে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমার সৌভাগ্য ২০২০ সালে ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছি। যে নামটা এক সময় বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। সেই নামটা আজ জনগণের মুখে মুখে বিশ্বব্যাপী ফিরে এসেছে। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর যে সম্মান বাঙালি জাতি পেয়েছিল। ১৯৭৫ সালেল ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সম্মান ধুলায় লুণ্ঠিত হয়েছে। সেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী বাংলার মাটিতে উদযাপন করতে পারার চেয়ে বড় সৌভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।
‘শুধু জাতির পিতার কন্যা হিসেবে না, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দেশের জনগণ এই সৌভাগ্য ও সুযোগ দিয়েছে। এজন্য বাংলার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করে যেতে পারছি, সেটা কত বড় পাওয়া তা আমি ও আমার ছোটবোন শেখ রেহানা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২০
এসই/এমএ