ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সমুদ্রে কমেছে মাছ, শুঁটকি পল্লিতে হাহাকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
সমুদ্রে কমেছে মাছ, শুঁটকি পল্লিতে হাহাকার

বাগেরহাট: সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে বৃষ্টির কারণে সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেনা জেলেরা। এর ফলে লোকসানের আশঙ্কায় হাতাশা বিরাজ করছে জেলে, বহরদর ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। 

জানা যায়, এ বছর জেলেদের জালে যে মাছ ধরা পড়ছে তা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। সব মিলিয়ে জেলে পল্লিতে নেই খুশির আমেজ।

তবে শুঁটকি মৌসুমে আগামী দুইমাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছে বনবিভাগ ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা।

বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সুন্দরবনের দুবলার চরসহ কয়েকটি চরে প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসব্যাপী চলে শুঁটকি আহরণ মৌসুম। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাস-পারমিট নিতে ডিপো মালিক, বহরদারসহ কয়েক হাজার জেলে শুঁটকি মাছের জন্য সমুদ্রে যান। সমুদ্র থেকে লইট্যা, ছুরি, চ্যালা, ভেটকি, কোরাল, চিংড়ি, রূপচাঁদা, কঙ্কন, মেদসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ সমুদ্র থেকে আহরণ করে মাচায় শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন। এর সঙ্গে থাকেন কিছু অভিজাত শুঁটকি ব্যবসারীরা। যারা কোনো প্রকার জীবনের ঝুঁকি ছাড়া শুধু টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে শুঁটকির ব্যবসা করে থাকেন। লাভের পরিমাণও তাদের অনেক।

এ বছর সুন্দরবনের পাঁচটি চরে ৫৩টি ডিপো মালিক, ১০৪০টি জেলে ঘরে ২০ হাজারের অধিক জেলে শুঁটকির জন্য মাছ আহরণ করছে। কিন্তু গত বছরের ১০ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে শুঁটকি নষ্ট হওয়া এবং ডিসেম্বরের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহের কারণে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সঙ্গে বৃষ্টি হওয়ায় ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’র মতো ঘটনা ঘটেছে শুঁটকি পল্লিতে। এ অবস্থায় জেলেরা যেমন লোকসানে পড়েছে তেমনি সরকারেরও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত বছর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শুঁটকি পল্লি থেকে রাজস্বের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৪১ লাখ। সেখানে এ বছর একই সময়ে সেই রাজস্ব মাত্র এক কোটি তিন লাখ টাকা। গেল বছর পুরো মৌসুমে আমাদের রাজস্ব আদায় ছিল দুই কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮১৯ টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর আয় অনেক কম হবে।

নজরুল ইসলাম, রুহুল হাওলাদার, সুরোত আলীসহ কয়েকজন জেলে বাংলানিউজকে বলেন, মৌসুমের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে কিছু শুঁটকি নষ্ট হয়েছে। বুলবুলের পর সাগরে মাছও কমে গেছে। প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে মাঝে মাঝে বৃষ্টি থাকে এ সময় তেমন পাছ পাওয়া যায় না। যে মাছ পাচ্ছি তার আকৃতিও ছোট।

তারা আরও বলেন, পরিবার-পরিজন ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ছয় মাসের জন্য সাগরে আসি শুধু আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকার জন্য। এবার মাছের যে অবস্থা ছয় মাস কাজ করে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হবে। দুবলার চরের জেলেদের জন্য এর থেকে কষ্টের কিছু নেই।

দুবলার চরের ব্যবসায়ী পঙ্কজ রায় ও আছাদ ছকাতি বাংলানিউজকে বলেন, সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য একটি ট্রলার পাঠাতে অনেক খরচ হয়। এর সঙ্গে দক্ষ জেলেদের বেতনও রয়েছে। সব মিলিয়ে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনেক খরচ করতে হয় আমাদের। কিন্তু এ বছর মাছের যে অবস্থা তাতে খরচাপাতি দিয়ে আমাদের তেমন কিছু থাকবে না বরং লোকসান গুণতে হবে।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে। এ বছর জেলেদের লক্ষ্যমাত্রা কোনোভাবেই পূরণ হবে না। তবে মৌসুমের বাকি দিনগুলোতে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে এবং মাছ বেশি পাওয়া যায় তাহলে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বুলবুল ও শীতের কারণে মাছ অনেক কম। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই মাসে জেলেরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।