ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চেনা শহর অচেনা লাগে!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২০
চেনা শহর অচেনা লাগে!

সিলেট: আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে সিলেট। শহরের তারবিহীন সড়কের অচেনা দৃশ্য নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। সেই ‘চেনা শহর’ শাহজালাল (র.) দরগাহ এলাকা থেকে ঘুরে আসছেন পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয়রাও।

সিলেটকে ডিজিটাল নগরে রূপ দেওয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা যাচ্ছে নগরবাসীদের। নাগরিকেদের মতে, সদিচ্ছা থাকলে পুরো দেশকে পাল্টে দেওয়া সম্ভব।

নগরবাসীর মতে, দেশের শহরের ভেতরে এমন সুন্দর সড়ক আগে দেখা যায়নি। এভাবে একে একে দেশের প্রতিটি শহর বদলে যাবে।

সিলেটের লণ্ডনি রোডের বাসিন্দা শাহিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, দিনের বেলায় দরগাহ সড়কটি যতটা না সুন্দর দেখায় রাতের আলোয় তার রূপ বেড়ে যায় বহু গুন। তারের জঞ্জাল নেই, এজন্য দীর্ঘদিনের চেনা এ শহর এখন অচেনা লাগে।

যুক্তরাজ্য থেকে দেশে বেড়াতে আসা নগরের রায়নগর রাজবাড়ি মিতালি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাতে বদলে যাওয়া শহরের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দেশের ভেতর শহরের এমন দৃশ্য কল্পনাকেও হার মানায়। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সব ক’টি সিটিকে এভাবে সাজানো সম্ভব।

বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা আব্দুল কাদির বাংলানিউজকে বলেন, তারবিহীন নগর আমাদের সিলেট, ভাবতে অবাক লাগে। আগের শহরের সঙ্গে নতুন শহরের এখন বিস্তর ফারাক।

সিলেট নগরীতে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয় চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি। সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সিলেটকে প্রথম ধাপে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকাস্থ ‘দি ইস্ট ওয়ে ইলেকট্রিক কোম্পানি এবং জে অ্যান্ড সি ইমপেক্স লিমিটেড জেভি’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সরকারের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো)-এর সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দরগাহ ও আশপাশ এলাকার প্রায় সাড়ে ৩শ’ গ্রাহক নতুন চালু হওয়া এ বিদ্যুৎ লাইনের সুফল ভোগ করছেন।

‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, সিলেট বিভাগ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নগরীর আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই থেকে হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ পর্যন্ত এরই মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের নির্মাণ কাজ সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকায় প্রায় ৩শ’ মিটার লাইন রয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় আম্বরখানা উপকেন্দ্র থেকে চৌহাট্টা হয়ে বন্দরবাজার পর্যন্ত দুটি এবং শেখঘাট উপকেন্দ্র হতে সার্কিট হাউস পর্যন্ত আরও একটি ১১ কেভি ফিডারকে সম্পূর্ণভাবে ভূগর্ভস্থ লাইনে রূপান্তরের কাজ চলমান। শিগরিগই কাজগুলো সমাপ্ত হবে।

রাতের মাজার গেট।  ছবি: বাংলানিউজ

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, সিলেট বিভাগ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে সিলেট শহরে পাইলট ভিত্তিতে ভূগর্ভস্থ লাইন রূপান্তর কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এতে একদিকে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের নির্ভরশীলতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

প্রকল্প পরিচালক কে এম নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজেকে বলেন, ২০১৮ সালের মে মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। হযরত শাহজালাল (র.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতিবিজড়িত পূণ্যভূমি দরগাহ এলাকা থেকে প্রথমে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন সরবরাহ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট নগরে ৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হবে।

অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আম্বরখানা থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইন বসে গেছে। এখন পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে রয়েছে। আগামী মাসে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইনের কাজ পুরোপুরি শেষ করার পর চৌহাট্টা থেকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত নেওয়া হবে। তাছাড়া ডিবি বক্স থাকায় ভূগর্ভস্থ লাইনের বিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ চুরির সুযোগ কম। কেউ এ লাইন থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারবে না।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি মূলত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করছে। এক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে এ প্রকল্পের ডিপিপিতে মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়ার জন্য রাস্তা খোঁড়ার টাকা বরাদ্দ ছিল না। এ বিষয়ে সিসিক সহযোগিতা করছে।

দরগাহ এলাকার ব্যবসায়ীদের অনেকে জানান, আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন হওয়ায় ওই এলাকায় এখন তারের জঞ্জাল নেই। দরগাহ এলাকা এখন অনেকটা তারের জঞ্জালমুক্ত।

সিলেট নগরের এ বদলে যাওয়াকে অনেকেই বিদেশের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে তুলনা করছেন। নগরবাসীর চাওয়া, এমনভাবে যেন ধারাবাহিকভাবে বদলে যায় পুরো দেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২০
এনইউ/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।