এখন দু’টি ট্রেন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচল করলেও রাজশাহী-কলকাতার ট্রেনটির রুট হবে ভিন্ন। প্রস্তাবিত রুটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অন্য দু’টি আন্তঃদেশীয় ট্রেনের তুলনায় অধিক দূরত্বের।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত রুটে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেনটি যাবে ভারতের মালদহের সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে। ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের সিঙ্গাবাদ, মালদহ, ফারাক্কা, কাটোয়া, খাগড়াঘাট হয়ে কলকাতার হাওড়ায় রেলস্টেশনে পৌঁছাবে। এ রুটে কলকাতা যেতে ৪২৫ কিলোমিটার পথ দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। সময় লাগবে প্রায় ১১ ঘণ্টা।
অথচ বর্তমানে রাজশাহীর যাত্রীদের গেদে সীমান্ত দিয়ে ২১৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে কলকাতা যেতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। ফলে নতুন রুটে দ্বিগুণ দূরত্বের কারণে রাজশাহী-কলকাতা প্রস্তাবিত রুটে সময়ও লাগবে দ্বিগুণ। তাই ট্রেনটি অদূর ভবিষ্যতে চালু হলে সময় বেশি লাগার কারণে রাজশাহীর যাত্রীরা এ রুটে চলাচল করবেন কিনা এই নিয়ে সন্দিহান রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এদিকে রাজশাহী-কলকাতা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে সর্বশেষ গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাজধানীর রেলভবনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এতে ভারতের পক্ষ থেকে মালদহ হয়ে রাজশাহী-কলকাতা রেল যোগাযোগের রুট প্রস্তার রাখা হয়।
ওই বৈঠকে জানানো হয়, এখন দুইটি ট্রেন দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা রুটে চলাচল করছে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’, আর খুলনা-কলকাতা রুটে চলছে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’।
এখন রাজশাহী-কলকাতা রুটে আরও একটি ট্রেন সার্ভিস চালু হলে, এটি দেশের শস্যভাণ্ডারখ্যাত উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চিকিৎসা, ভ্রমণ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। আমদানি-রপ্তানির জন্য উন্মোচিত হবে নতুন ক্ষেত্র।
ওই বৈঠকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রাজশাহী থেকে মালদহ হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একটি আন্তঃদেশীয় ট্রেন চালু করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। উভয়পক্ষের আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া যমুনা নদীর পশ্চিমপাড়ে ভারতের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত একটি আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা হয়।
এর আওতায় সিরাজগঞ্জ বাজারে ছোট পরিসরে আইসিডি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ভারত থেকে ২০টি লোকোমোটিভ সরবরাহ বিষয়ে বলা হয়, কারিগরি দল পরিদর্শন করে বিভিন্ন শর্তাবলী ঠিক করে ইঞ্জিনগুলো দ্রুত আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।
এই ট্রেন সার্ভিস চালু হলে উত্তরের শেষ সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশন চত্বরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সুবিধা চালু করতে হবে। বর্তমানে রহনপুরে কাস্টমস কার্যালয় থাকলেও তাদের নিজস্ব ভবন নেই। রহনপুর রেলবন্দর চত্বরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য রেলওয়ের যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। সে জায়গাতে এ কার্যালয়গুলো খোলার সম্ভাবনাও যাচাই করা হচ্ছে। তবে প্রস্তাবিত রুটে যোগাযোগ স্থাপনে দূরত্ব ও সময় নিয়ে ভাবনায় পড়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, প্রস্তাবিত রুটে রাজশাহী-কলকাতা রেল যোগাযোগে বর্তমানে চলাচলকারী অন্য দু’টি ট্রেনের তুলনায় সময় বেশি লাগবে। এ রুটে আড়াই ঘণ্টায় রাজশাহী থেকে রহনপুর, সেখান থেকে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে মালদহ পৌঁছানো যাবে। পরে মালদহ থেকে কলকাতা যেতে আরও প্রায় ৩২৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। এতে সময় লাগবে প্রায় ৮ ঘণ্টা। তাই প্রস্তাবিত রুটে ৪২৫ কিলোমিটার যাত্রা করে রাজশাহী থেকে কলকাতা পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ১১ ঘণ্টা।
বর্তমানে দু’দেশের মধ্যে চলাচলকারী দুইটি ট্রেনে ২১৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে কলকাতায় পৌঁছাতে সময় লাগছে পাঁচ ঘণ্টা। ফলে রাজশাহী-কলকাতা প্রস্তাবিত রুটে অতিরিক্ত সময় লাগবে আরও ছয় ঘণ্টা। ফলে এ অঞ্চলের লোকজন দীর্ঘ দূরত্বের পথ পাড়ি দিয়ে ভ্রমণ করবেন কিনা তারা সন্দিহান। তাই রুট পুনঃনির্ধারণে ভারতের সঙ্গে আরও আলোচনা হবে বলেও উল্লেখ করেন এ রেলওয়ে কর্মকর্তা।
এজন্য রাজশাহী-কলকাতা রেল যোগাযোগ চালুর বিষয়টি এখনও ‘রুট সিলেকশন’ পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ।
তিনি বলেন, রুট সিলেকশন চূড়ান্তের পর কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, র্যাক নির্ধারণ ও সময়সূচিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত করা হবে।
প্রস্তাবিত রুটের জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মালদহ হয়ে ট্রেন চলাচল করলে অন্তত সাড়ে ছয় ঘণ্টা সময় বেশি লাগবে। বর্তমানে রাজশাহী থেকে দর্শনা গিয়ে সেখান গিয়ে গেদে সীমান্ত দিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় কলকাতা পৌঁছে যাওয়া যায়। কিন্তু প্রস্তাবিত রুটে দূরত্ব ও সময় দুটোই বেশি। ফলে এ অঞ্চলের যাত্রীরা দীর্ঘপথ যাত্রা করবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চিয়তা থেকেই যায়। যদিও এই রুট দিয়ে এখন মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ট্রেনের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
বিষয়টি এরই মধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রুট সিলেকশন’ নিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এই রুটের ম্যাপও রেলমন্ত্রীর কাছে প্রদর্শন করা হয়েছে। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী ভারত হাইকমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শিগগিরিই কথা বলবেন। আশা করছি, দ্রুতই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
এসএস/এএটি