২১তম স্প্যান বসানোর নয় দিনের মাথায় ২২তম স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়েছে। আরও ১৯টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে বাকি ২.৮৫ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় স্প্যান বসানো শেষ হয়। এরআগে, সকাল পৌনে ৯টায় ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন বহন করে রওনা দেয়। সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের কাছে পৌঁছায় সকাল সোয়া ৯টার দিকে।
আরও পড়ুন...পদ্মাসেতুতে বসছে ২২তম স্প্যান
প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ভাসমান ক্রেনটি নোঙর করে পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিং এর ওপর। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সময় থাকায় এবং সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রকৌশলীরা অল্প সময়ের মধ্যেই স্প্যান বসাতে সক্ষম হন। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মাসেতুতে বর্তমানে স্প্যান আছে ৩৫টি। এর মধ্যে ২১টি স্প্যান পিলারের উপর সংযুক্ত করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে স্প্যান আছে ১৪টি। চারটি স্প্যান সমুদ্র পথে আছে মাওয়ায় আসার জন্য। বাকি দুইটি স্প্যান চীনে আছে। চলতি মাসের ৩০ ও ৩১ তারিখ ২৩ তম স্প্যান ‘৬-এ’ সেতুর ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারের উপর বসানোর পরিকল্পনা আছে প্রকৌশলীদের। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৬পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ছয়টি পিলারের কাজ শেষ হতে পারে এপ্রিল মাসের মধ্যে।
জানা যায়, পদ্মাসেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৭-বি’ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৭-সি’ সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১১ মার্চ। স্প্যান ‘৭-ই’ সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১৩ মে। স্প্যান ‘৭-এফ’ সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘১-এফ’ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে অস্থায়ীভাবে বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর। স্প্যান ‘৬-এফ’ সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ই’ সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ডি’ সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ। স্প্যান ‘৩-এ’ সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। স্প্যান ‘৬-সি’ সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল। স্প্যান ‘৩-বি’ সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ মে। স্প্যান ‘৩-সি’ সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘৪-এফ’ সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৪-ই’ সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর এবং স্প্যান ‘৩-ডি’ সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের উপর বসে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। ২৬ নভেম্বর সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান ‘৪-ডি’। ১১ ডিসেম্বর ‘৩-ই’ স্প্যান বসে সেতুর ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের উপর। ১৮ ডিসেম্বর ২১ ও ২২ নম্বর পিলারে উপর বসে স্প্যান ‘৪-সি’। ৩১ ডিসেম্বর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান ‘৩-এফ’। ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘৬-বি’ স্প্যান বসে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের উপর।
পুরো সেতুতে দুই হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। পদ্মাসেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
এনটি