চিকিৎসকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে এ মৃত্যু করোনা ভাইরাসের কারণে নয় বলে জানালেও আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকার মানুষের মধ্যে।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকালে ওই গ্রামে শামীমা বেগম এবং দিবাগত রাত ২টার দিকে একই পরিবারের মীর জুয়েলের ভাই মীর সোহেলের ছেলে আব্দুর রহমান মারা যায়।
লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. কামরুল হাসান পাটোয়ারী বাংলানিউজকে জানান, শনিবার বিকেলে জ্বর, পাতলা পায়খানা ও কাঁপুনি নিয়ে স্থানীয় একজন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন শামিমা। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। পরে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়তে শুরু করে একপর্যায়ে মারা যান শামিমা।
এরপর রোববার বিকেলে একই পরিবারের আব্দুর রহমান নামে একটি শিশু জ্বরে আক্তান্ত হয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন। রাতে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে একপর্যায়ে রাত ২টায় মারা যায় সে।
স্থানীয়রা ও পরিবারের সদস্যরা করোনা ভাইরাসের আশঙ্কা করছেন। খবর পেয়ে একটি মেডিক্যাল দল ঘটনাস্থলে এসে ছবি তুলে শিশু আব্দুর রহমানের শরীরের বিভিন্ন স্থানের আলামত সংগ্রহ করেছে। বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য তারা ওই আলামত রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠাবে।
জানা যায়, যারা মারা গেছেন তাদের সঙ্গে স্থানীয় চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের কোনো চলাফেরা নেই ও চীনেও কখনো যাতায়াত ছিল না।
মীর জুয়েল ও মীর সোহেলের চাচাত ভাই মীর শিবলী বলেন, সকালে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন ভাবি। ধীরে ধীরে তার শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল ছোপ দেখা দেয়। জ্বর আসার ঘন্টা খানেকের ব্যবধানে তিনি মারা যান। পরে ভাতিজা আব্দুর রহমান আকস্মিক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোববার দিবাগত রাত ২ টার দিকে মারা যায়। আব্দুর রহমান জ্বরে আক্রান্ত হলে মুহূর্তে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল ছোপের চিহ্ন ফুটে ওঠে। ধীরে ধীরে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক দেখিয়েছিলাম। ঢাকায় নেওয়ার সুযোগ পাইনি। রোববার বিকেলে ভাবিকে এবং সোমবার দুপুরে দাফন করি ভাতিজাকে। তারা কোন রোগে মারা গেল বুঝতে পারছিনা। প্রশাসনের লোকজন ও ডাক্তাররা এসেছিলেন। কিন্তু, ডাক্তাররা রোগ সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি।
লৌহজং উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, সোমবার সকালে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। শিশুর মরদেহ সকালে দাফন করা হয়। গতকাল ওই শিশুর চাচি মারা গিয়েছিল। তবে, স্থানীয়দের কেউ কেউ আতঙ্কিত এটা ভেবে যে চীনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তারা মারা যেতে পারে। কিন্তু, স্থানীয় ডাক্তাররা আমাকে জানিয়েছে মরদেহে যে সব লক্ষণ দেখতে পেয়েছে তাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার সম্ভাবনা নেই। আসলে ওই বাড়ির পাশে যশলদিয়া পানি শোধনাগারে কিছু চীনা লোক কাজ করে। এছাড়াও পদ্মাসেতু প্রকল্পেও চীনারা কাজ করছে। সে কারণে এমন আতঙ্ক ছড়াতে পারে।
মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৪ দিনের মধ্যে যদি তাদের কেউ চীন থেকে আসত তাহলে আমরা সেরকম কিছু মনে করতাম। আসলে, লৌহজংয়ে কিছু প্রকল্পে চীনারা কাজ করে। সেখান থেকে করোনা ভাইরাস এই এলাকায় ছড়াতে পারে বলে অনেকে আগে থেকে আতঙ্কিত। হঠাৎ জ্বরে এই দুইজনের মৃত্যুর পর স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক হতে পারে।
লৌহজং ও শ্রীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ মো. আসাদুজ্জামান জানান, গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে পরিবেশ শান্ত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে সেদিকে নজর রাখছে পুলিশ।
মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার মো. আতিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, প্রাথমিকভাবে করোনা ভাইরাসের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার আরও একটি মেডিক্যাল টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২০
আরএ