ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শিশুকে হাসপাতাল মর্গে রেখে কারাগারে ফিরে গেলেন মা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০
শিশুকে হাসপাতাল মর্গে রেখে কারাগারে ফিরে গেলেন মা

ঢাকা: মা-শিশু (বাঁধন) দুজনেরই ঠিকানা ছিল কাশিমপুরের মহিলা কারাগার। মায়ের সঙ্গে শিশুটি জেলে থাকতো আদালতের নির্দেশে। সেখানেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৮ জানুয়ারি ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের ২১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ জানুয়ারি বাঁধনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে একেবারেই চুপসে গেছেন পারভীন।

জানা যায়, আড়াই বছর বয়সী বাঁধন থাকতো মা পারভীনের সঙ্গে। আর পারভীনকে পুলিশ প্রায় এক বছর আগে খিলগাঁওয়ের গোড়ান থেকে ইয়াবা বিক্রির সময় গ্রেপ্তার করে।

পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ঘুরে তার ঠিকানা হয় কাশিমপুর মহিলা কারাগার। এসময় বাঁধনের বয়স ছিল এক বছর ৬ মাস। তার দেখভালের কেউ ছিল না বলে আদালতের নির্দেশে মায়ের সঙ্গে জেলে থাকার সুযোগ পেয়েছিল শিশুটি। এক বছর ধরে তাই বাঁধনেরও ঠিকানা ছিল কাশিমপুর মহিলা কারাগার। সেখানেই বেড়ে উঠছিল সে।

বাঁধনের মৃত্যুর পর ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডে বিমর্ষ হয়ে বসে ছিলেন পারভীন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় স্বামী আমাকে ছেড়ে দেয়। কোনো কারণে আমি খিলগাঁও গোড়ানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ইয়াবাসহ আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আমার কেউ নেই। একমাত্র ভাই আছে তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আমার শেষ সম্বল ছিল ওই সন্তান। সেও হাসপাতালে মারা গেলো। আমার আর কেউ নেই। আমি কারাগারে বন্দি। আমার সন্তানের জন্য আমি জানাজা-দাফন কিছুই করতে পারলাম না, সব ছেড়ে দিয়েছি পুলিশের ওপর। তারা যেটা ভালো মনে করে, সেটাই করবে।

কাশিমপুর কারাগারের মহিলা সেলের জেলার মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পারভীন মাদক মামলায় এক বছর ধরে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছে। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার সন্তান বাঁধন অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে শিশুটিকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পারভীন সঙ্গে ছিল। ২৬ জানুয়ারি গাজীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরে সেখান থেকে ২৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আদালতের নির্দেশে গত ১ বছর ধরে শিশুটি তার মায়ের কাছেই ছিল।

ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, শিশুটি ভেরি ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছে। শুরু থেকেই তার প্রেশারের অবস্থা ভালো ছিল না।  প্রেশার ফল করার কারণে তার কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। শিশুটির কিডনি ফেলরের কারণে মৃত্যু হয়েছে।

ঢামেকে ডিউটিরত কারারক্ষী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শিশুটির মা আমাদের বলেছে, তার কোনো আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। তাই মরদেহটি ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। তারাই আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে মরদেহ দাফনের জন্য হস্তান্তর করবে।

ঢামেক হাসপাতাল মর্গ সূত্র জানায়, রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি) আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে দাফনের জন্য শিশুটির মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২০
এজেডএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।