ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন এবার রাজশাহীতেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০
ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন এবার রাজশাহীতেই

রাজশাহী: রাজশাহীর পুলিশ লাইন্সে চালু হতে যাচ্ছে দেশের তৃতীয় ফরেনসিক ল্যাব। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বেলা ১১টায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফরেনসিক ল্যাব উদ্বোধন করবেন। ল্যাবটির যাত্রা শুরু হলে আর ঢাকা যেতে হবে না। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব জেলার ফরেনসিক টেস্ট হবে সেখানেই। ফলে সময় কমবে; তদন্তও দ্রুত শেষ হবে।

বর্তমানে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে চালু আছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাব। রাজশাহীরটি হবে তৃতীয় ফরেনসিক ল্যাব।



রাজশাহী সিআইডি অফিস বলছে- সাধারণত ক্লু-লেস বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন ও বিভিন্ন আলামত, ডিএনএ ও সাইবার টেস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ আলামত পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। এ ফরেনসিক ল্যাব বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধ ঘটনা রহস্য উদঘাটনে ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে যোগাযোগ করতে হয়। এতে সময় বেশি প্রয়োজন হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট দিতেও দেরি হয়। ফলে মামলার তদন্ত কাজে বিলম্ব ঘটে। এ জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ফরেনসিক ল্যাব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে তৃতীয় ল্যাবটি চালু হতে যাচ্ছে।

সিআইডির রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ল্যাব স্থাপনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে ফরেনসিক ল্যাবের উদ্বোধন করবেন। এর পরপরই যাত্রা শুরু হবে ফরেনসিক ল্যাবটির। এখানে রাজশাহী ও রংপুরে বিভাগের সব ফরেনসিক টেস্ট করা যাবে। আর ঢাকা যেতে হবে না।

রাজশাহীর এ ফরেনসিক ল্যাবে মামলা তদন্তে নয় ধরনের সুবিধা পাবে পুলিশ। পরীক্ষাগারটিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, অনু বিশ্লেষণ, ফুটপ্রিন্ট, রাসায়নিক, ব্যালিস্টিকস, হস্তলিপি ও জালনোট শনাক্ত করণের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ভিসেরা, নারকোটিক ও অ্যাসিড টেস্টসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা করা হবে।

রাসায়নিক পরীক্ষাগারের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের মাদকদ্রব্য, মৃত মানুষ ও পশু-পাখির ভিসেরা, কবর থেকে উত্তোলিত হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিস্যু, বিষাক্ত বা চেতনানাশক পদার্থের উপস্থিতি, রক্ত মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, অ্যাসিড মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ, জালটাকা তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল, জিএসআরসহ বিভিন্ন আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মতামত দেওয়া।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট শাখায় রয়েছে ক্রাইমসিন থেকে সংগৃহীত দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙ্গুলের ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া এবং সংগৃহীত ফিঙ্গারপ্রিন্ট ল্যাটেস্ট প্রিন্ট এএফআইএস ডাটাবেজে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে তল্লাশি করে মিল বা অমিল সম্পর্কে মতামত দেওয়ার সুবিধা। হস্তলিপি শাখার কাজ হচ্ছে- বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় বিবাদমান দলিলের লেখা বা স্বাক্ষর জাল, নম্বর ঘষামাজা করে বা রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করে অবমোচন করা হলে তা পরীক্ষা করে মতামত দেওয়া যাবে।

এদিকে, ফটোগ্রাফি শাখার কাজ হবে অপরাধীদের ছবি গ্রহণ, সংরক্ষণ, ফরেনসিক বিভিন্ন শাখার আলামতের বর্ধিত ছবি সরবরাহ করা এবং বিতর্কিত ছবির সঙ্গে নমুনার মিল আছে কি না তা বিশ্লেষণ করা। জালনোট ও মেকি মূদ্রা শাখায় দেশি-বিদেশি সকল কারেন্সি নোট ও কয়েন বা ধাতব মুদ্রার বিষয়ে ভিডিও স্পেট্রাল কম্পারেটরের মাধ্যমে নোটের দৃশ্য-অদৃশ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করা। আর ব্যালিস্টিক শাখায় আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধের ঘটনায় উদ্ধারকৃত বা অপরাধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও ফায়র্ড বুলেট বা এসবের কোনো অংশ বিশেষ পরীক্ষা করা যাবে খুব সহজেই।

এই ফরেনসিক ল্যাবের অনুবীক্ষণ শাখায় গাড়ির ইঞ্জিন, চেসিস নম্বর, আগ্নেয়াস্ত্রের নম্বর, ট্রেড মার্ক তৈরিকারি দেশের নাম এবং কোনো ধাতব বস্তুর ওপর থেকে মুছে ফেলা/বিকৃত করা, ক্রমিক নম্বর সংখ্যা বা যে কোনো চিহ্ন পরীক্ষা কর যাবে।

এছাড়া পদচিহ্ন শাখা পায়ের বা জুতার ছাপ পরীক্ষা করে অপরাধী বা ভুক্তভোগী শনাক্তকরণের কাজ করবে। ক্রাইমসিন ইউনিট অপরাধের স্থল পরিদর্শন করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ, ডকুমেন্টেশন, সংরক্ষণ করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংশ্লিষ্ট থানা বা তদন্তকারি কর্মকর্তাকে দেবে। সেখান থেকে শাখা নির্বাচান করে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আর এসব ফরেনসিক টেস্ট করা হবে রাজশাহীতেই। এজন্য ঢাকা যেতে হবে না। সময়ও লাগবে কম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক ( ডিআইজি) এ কে এম হাফিজ আক্তার, সিআইডির ফরেনসিক শাখার ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহসহ সিআইডি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২০
এসএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।