ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তিনদিন পর স্বেচ্ছায় বেরিয়ে এলেন ‘গুম’ হওয়া শিক্ষক!

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০
তিনদিন পর স্বেচ্ছায় বেরিয়ে এলেন ‘গুম’ হওয়া শিক্ষক! ছবি: সংগৃহীত

মধুপুর (টাঙ্গাইল): টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে বেসরকারি স্কুল শিক্ষক মো. সুলতানুজ্জামান হেলাল (৫০) তার অফিস কক্ষ থেকে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন ও পরে গুম হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল তার কোনো ভিত্তি নেই। ওই শিক্ষক প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গুমের নাটক করেছিলেন। ঘটনার তিনদিন পর স্বেচ্ছায় ‘গুম’ ওই শিক্ষক টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যানে জনসম্মুখে বেরিয়ে এসেছেন।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় আবির্ভূত হয়েছেন। রাজবাড়ী জেলার বাসিন্দা বিটিসিএল- টাঙ্গাইলে কর্মরত কাজী রইজ উদ্দিনের মাধ্যমে তার প্রথমে পরিবারের সঙ্গে ও পরে আইন প্রযোগকারী সংস্থার সদস্যদের সাথে যোগাযোগ হয়।

খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ তাকে সেখান থেকে তাদের হেফাজতে নিয়ে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে ধনবাড়ী থানা পুলিশের হেফাজতে হেলালকে দিয়ে দেয়া হয়েছে।

উপজেলার বানিয়াজান ইউনিয়নের বাঐজান গ্রামের মৃত হাসান আলী মণ্ডলের ছেলে হেলাল ধনবাড়ী পৌর শহরের নলহরা (নল্যা) বাজারের আরএনজি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক তথা প্রধান শিক্ষক।

বৃহস্পতিবার(৩০ জানুয়ারি) রাতে তিনি নল্যা বাজারের জনৈক বিষ্ণুর সেলুনের সামনে মোটরবাইক রেখে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পরও ফিরে না আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন স্বজনরা। মোবাইল ফোনে তাকে খোঁজা হয়। পরিবারসহ স্থানীয়রা খোঁজার এক পর্যায়ে তার স্কুলের অফিস কক্ষের মেঝেতে রক্তের দাগ ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। পুলিশ সেগুলো জব্দ করে।  এ থেকে তাকে খুন করে গুম করা হয়েছে বলে ধারণা করতে শুরু করেন স্বজনরা।  

পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্টরা মাঠে নামে। কিন্তু ঘটনার কোনো কিনারা তারা করতে পারছিল না। রহস্য ঘণীভূত হতে থাকে। অবশেষে তিনদিন পর রোববার সকালে টাঙ্গাইল পৌর উদ্যানে তার খোঁজ মেলে।

রাজবাড়ী জেলার বাসিন্দা বিটিসিএল- টাঙ্গাইলে কর্মরত কাজী রইজ উদ্দিন জানান, হেলাল অসুস্থ অবস্থায় তাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। হেলাল তাদের জানিয়েছেন- দুর্বৃত্তরা তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে, নাকে চেতনা নাশক দিয়ে অজ্ঞান করে ঢাকা নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে কোনো এক নারীর সহযোগিতায় তিনি ছাড়া পেয়েছেন। তেঁতুল খাইয়ে তার নেশা কাটানো হয়েছে। ‘টাঙ্গাইলের মানুষ’ এটুকু শুনে ওই নারী কারো মাধ্যমে টাঙ্গাইলে রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

এদিকে,  গত তিনদিন ধরে তার খোঁজ করতে স্বজনরা পেরেশানীতে ছিলেন। বড় ভাই আবুবকর সিদ্দিক, ভাতিজা আরিফ, ভাগ্নি জামাতা কায়সার জানান, তার খোঁজে তারা নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে মাঠে ছিলেন। অনেক অর্থও খরচ হয়েছে।

ধনবাড়ী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মাজাহার জানান, ডিবি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাদের হেফাজতে দিয়েছে।

অফিসার ইনচার্জ(ওসি) চান মিয়া জানান, প্রতিযোগিতা করে স্কুল গড়েছিলেন হেলাল। আশানুরূপ ছাত্র না পেয়ে এবং সম্ভবত দেনায় পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। অফিসে পড়ে থাকা রক্তকে তিনি মুরগির রক্ত উল্লেখ করে জানান, প্রতিপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদের জেরে শিক্ষা দিতে তিনি গুমের এ নাটক করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।