পাবনা সুজানগরের চাকরি প্রার্থী সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, ১৩ অক্টোবর ২০১৫ সালে প্রকাশিত পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে সহকারী ব্যবস্থাপক (হিসাব/অর্থ) পদে আবেদন করি। এখন পর্যন্ত বিএসএফআইসি কোনো পরীক্ষা নিতে পারে নি।
তিনি বলেন, এই বিজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে আমি ২১ জানুয়ারি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করে লিখিতভাবে জানতে চাই, পূর্বের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কোনো রূপ কার্যক্রম সম্পন্ন না করে পুনরায় কেন একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আমার আবেদনের কোনো জবাব দেয়নি করপোরেশন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় আছি। ভালো কোনো চাকরি পাইনি। চাকরির বয়সও নেই। পরীক্ষা কবে হবে সেটারও কোনো খোঁজ খবর দিচ্ছে না করপোরেশন।
একই পদে আবেদন করেছেন আরেক চাকরি প্রার্থী পারভেজ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে আবেদন করেছি। এতদিনেও পরীক্ষা হয়নি। পরীক্ষা নিবে কী না সেটাও কেউ জানাচ্ছে না। পরীক্ষা না নিলে আমাদের পরীক্ষার ফি করপোরেশন কেন রাখবে। সেটা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত, না হয় আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হোক।
শুধু সেলিম রেজা কিংবা পারভেজই নয় তাদের মতো হাজার হাজার বেকার তরুণ-তরুণী বিএসএফআইসিতে চাকরির আবেদন করে পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আগের সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হয়েছে।
তবে কি কারণে বাতিল করেছে এর সঠিক কারণ তিনি জানাননি।
চাকরি প্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিনা নোটিশে দীর্ঘদিন পর বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা করপোরেশনের ঠিক হয়নি। এতে নতুন চাকরি প্রত্যাশীরা করপোরেশনের প্রতি উৎসাহ হারাবে পাশাপাশি নতুনদের হতাশাও আরও বাড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৩ অক্টোবর ২০১৫ সালে ব্যবস্থাপক (অর্থ/হিসাব) ও সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ/হিসাব) পদে ২০টি করে মোট ৪০টি পদে জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে সময় এ দুই পদে প্রায় সাড়ে সাত হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। এর আগে ১ আগস্ট ২০১৪ সালের ইক্ষু গবেষণা সহকারী (সিডিএ) পদে ৩০০ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে, আবেদন জমা পড়ে ১৭ হাজারেরও বেশি। এছাড়াও চিনির কলগুলোতে অবস্থিত বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে আবেদন জমা পড়ে ২০ হাজার।
আরও জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথম শ্রেণির ১০৭টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরের বছরের ১৪ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হলেও ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠান তিনটি পদের ফল স্থগিত করে।
সর্বশেষ গত বছরের ৯ জানুয়ারি আবারও একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। এই বিজ্ঞাপনে মেডিক্যাল অফিসার আটজন, সহকারী ব্যবস্থাপক (যন্ত্রকৌশল) ১৬ জন, সহকারী ব্যবস্থাপক (তড়িৎকৌশল) চারজন, সহকারী ব্যবস্থাপক (পুরকৌশল) সাতজন, সহকারী ব্যবস্থাপক (পরিবহন প্রকৌশল) পাঁচজন, সহকারী ব্যবস্থাপক (হিসাব/অর্থ) ২৭ জন, ইক্ষু গবেষণা সহকারী (সিডিএ) ৩০০ জনসহ মোট ৩৫৭ জন নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভিন্ন পদে আবেদন করেছে এমন চাকরি প্রার্থীরা বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত এই বিজ্ঞাপগুলোতে প্রত্যেকেই ব্যাংক ড্রাফট/পে অর্ডার বাবদ ৩০০ টাকা করে জমা দিতে হয়েছে। নতুন বিজ্ঞাপনে টেলিটকের সার্ভিস চার্জসহ পরীক্ষা ফি বাবদ ৭৮৪ টাকা নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করেছে, এতটাকা নেওয়ার পর সঠিক সময়ে পরীক্ষা হবে তো?
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েব সাইটে প্রদর্শিত প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত এবং নিদেশনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন জুলাই/২০১৯ দেখা যায়, আর্থিক সংকটের কারণে বিএসএফআইসি এর শূন্য পদে জনবল নিয়োগের বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৩ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর স্থগিত করা হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে সরকারি সকল বিধি পালন করে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০
পিএস/আরকেআর