ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জমে ওঠেছে কলকাতা বইমেলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০
জমে ওঠেছে কলকাতা বইমেলা

কলকাতা: কলকাতার বাঙালির বারোমাসে তেরো পার্বণ। তাই বাঙালির নতুন বছরটা শুরু হয় আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা উৎসবের সূচনা করে। প্রতিবছরই অধীর আগ্রহে থাকেন বইপ্রেমীরা- এবার মেলায় নতুন কী চমক অপেক্ষা করছে! 

শুধু পাঠক-ই নন, নামি প্রকাশনা সংস্থাগুলোও বছরজুড়ে অপেক্ষা করেন এই সময়টায় পাঠকদের চমক দেবে বলে। অন্যবারের মতো এবারও পাঠকের জন্য বইয়ের সমাহার নিয়ে এসেছে প্রকাশনা সংস্থাগুলো।

 

শুধু বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলো-ই নয়, এই সময়টার অপেক্ষায় থাকেন ছোট প্রকাশকেরাও। এমনও প্রকাশক রয়েছেন যারা এই সময়টার জন্য মাত্র ২০ কপি থেকে ২৫ কপি নতুন বই ছাপিয়ে থাকেন। অর্থাৎ ছোটবড় প্রতিটা প্রকাশক-ই নিজ নিজ ভাবনায় নতুন বইয়ের সম্ভার পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন বইমেলাকে কেন্দ্র করে।

কেউ গুরুত্ব দেন বর্তমান পরিস্থিতির ওপর, কেউ ব্যক্তিকেন্দ্রিক বইয়ের ওপর। তো কারও চমক থাকে রহস্য, রোমাঞ্চ, ভৌতিক বইয়ের ওপর। আবার কারও চিন্তায় থাকে বিনে পয়সায় ধর্মগ্রন্থ বিতরণের। কেউ আবার তুলে ধরেন নতুন কবি সাহিত্যিকদের।  

কলকাতার নামি প্রকাশনা সংস্থা দেজ পাবলিশিং। এবার প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ ধরনের নতুন বই ছাপিয়েছে সংস্থাটি। প্রকাশনা সংস্থার কর্তা শুভঙ্কর দে জানান, সাধারণ পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন লেখকের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বই ছাপানো হয়েছে। রয়েছে গল্প, উপন্যাস, রচনাবলীও। উল্লেখযোগ্য হারে এবার তাদের স্টলে আছে জেমস রেনেলের ওপর বই।  

কে এই জেমস রেনেল? উত্তরে তিনি বলেন, জেমস রেনেল ছিলেন একজন সমুদ্রবিজ্ঞানী এবং ঐতিহাসিক।  

রেনেলই একমাত্র অবিভক্ত বাংলার মানচিত্র যতটা সম্ভব নিখুঁত করে এঁকেছিলেন। তাঁর জীবন নিয়ে একটি উপন্যাস লিখেছেন তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়। যার নাম কম্পাসওয়ালা। তাছাড়া পাঠকদের জন্য আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক বইও আছে। আছে নব লেখকদের উপন্যাসও।

সবাই জানি সম্রাট আকবরের দরবারে অন্যতম পারদর্শী উপদেষ্টা ছিলেন বীরবল। বুদ্ধি এবং রসিকতার মাধ্যমে অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন তিনি। ইতিহাসের বইয়ে এই তথ্যই জানা যায়। কিন্তু এমন একজন ঐতিহাসিক চরিত্রের কী অন্যদিক ছিল না? নিশ্চই আছে! এনিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে একখানা বই লিখে ফেলেছেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এছাড়া সুরকার ও গীতিকার সলীল চৌধুরীর ওপরও না জানা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে এই মেলায়। বইয়ের নাম জীবন উজ্জীবন এবং।  

বইটির সম্পাদনা করেছেন প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী। এসবের বাইরেও কমবেশি প্রতিটা স্টলেই আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর বেশ কিছু বই। যেখানে বাংলা ও উর্দু মিলেমিশে একাকার।  

আর এক নামি প্রকাশনা সংস্থা ‘মিত্র ও ঘোষ ’ এবারে জোর দিয়েছে রহস্য রোমাঞ্চ ভৌতিক বইয়ের ওপর। যেমন হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের পঁচিশটি সেরা ভৌতিক গল্প, গজেন্দ্রকুমার মিত্রের অলৌকিক সমগ্র ইত্যাদি।  

সংস্থার কর্ণধার সবীতেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, আমরা সমীক্ষা করে দেখেছি ভূতের বাজার ভালোই আছে। তাই অনেক এমন বিষয়ের ওপর বই পাঠকদের জন্য এনেছি। এসব ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের বইও থাকছে। ছোটবড় সবার জন্যই এমন বই থাকছে প্রকাশনা সংস্থার স্টলে।

বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বামপন্থিদের নিয়ে লেখা বইও। যেমন- লিখেছেন এক রাজনীতিবিদ তথাগত রায়। বইয়ের নাম ‘বামপন্থা ভয়ঙ্করী’।  

রাজনীতির বাইরে গিয়ে গান নিয়ে বই লিখেছেন বাংলা ব্যান্ড ভূমির ড্রামার সৌমিত্র রায় ‘বেশ করেছি, গান করেছি’। এসবের বাইরে পাঠকদের জন্য থাকছে সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের চিত্রপট। যার মূল বিষয় হচ্ছে- ব্রিটিশ আমল থেকে বর্তমান যুগের নানা কাহিনী।

দীপ প্রকাশন এবার বইমেলায় ৩০টির মতো নতুন বই প্রকাশ করেছে। তাতে মূলত গল্প ও উপন্যাস রয়েছে। এর মধ্যে খেলার বই যেমন রয়েছে, তেমনই ধর্মের বইও আছে। আছে একেবারে নতুন লেখকদের নাটক, অর্থনীতি, কবিতার বইও।

এবারের বইমেলায় রাজ্যের তথ্যও প্রযুক্তিমন্ত্রী তথা নাট্যকার ব্রাত্য বসুর লেখা ‘যে কথা বলনি আগে’। এছাড়া রয়েছে তসলিমা নাসরিনের ‘ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে’।  

কবি সুবোধ সরকারের ‘আমি প্রতিবাদ আমি প্রেম নামক’ একটি কবিতার বই। সংস্থার কর্তা শংকর মণ্ডলের কথায় পাঠকদের আকর্ষণ করতে বিভিন্ন বিষয়ের বই এবার মেলায় পাওয়া যাবে।

হলি চাইল্ড নামে আরেকটি প্রকাশনা সংস্থা এবার একটু অন্য রকম বই পাঠকদের কাছে তুলে ধরছে। তাদের কর্তা শুভাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা এবার ১০০ বছরের লেখকদের নিয়ে একটি প্রেমের বই প্রকাশ করেছি। বইটির নাম শতাব্দীর সেরা রোমান্টিক গল্প। ভারতীয় লেখকদেরই গল্প রয়েছে এই বইয়ে। তাছাড়া কল্পবিজ্ঞানের উপর বইও পাবেন পাঠকরা।

শিশু সাহিত্য সংসদের পক্ষ থেকেও এবার একাধিক নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। তাতে যেমন রহস্য, অপরাধমূলক বিষয়বস্তু আছে, তেমনই ব্যক্তিগত জীবনী এবং কল্পবিজ্ঞানের বিষয়ও রয়েছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হল, রাজা নেপচুনের তরবারি, সুমেরু অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে আর্কটিক অ্যাডভেঞ্চার নামক একটি বইও রয়েছে।  

সংস্থার ডিরেক্টর চন্দনা দত্ত জানান, বড়ছোট সবার জন্য বই প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকরা এই বই উপভোগ করবেন বলে তার আশা।

পিছিয়ে নেই তপতী পাবলিকেশনও। বিভিন্ন পরিচিত লেখকের গল্প ও উপন্যাসের বই প্রকাশ করেছে তারা। প্রকাশনা সংস্থার কর্তা রিঙ্কু চক্রবর্তী বলেন, যেমন পবিত্র সরকারের ‘ছলছুতো’ নামক বই আছে, তেমনই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বইও আছে। শুধু তাই নয়, ছোটদের বাংলা ব্যাকারণের বই থেকে কুইজের বইও বের করা হয়েছে এবার।

এবারে বইমেলায় ছয়শো প্রকশনা সংস্থা ও দুশো লিটল ম্যাগাজিন অংশগ্রহন করেছে। ফলে গল্প, উপন্যাস কিংবা কবিতার বাইরেও আছে অন্যরকম বই। যেমন গিরিজা লাইব্রেরি মত প্রকশনী সংস্থাগুলো। তাদের বিশেষত্ব আধ্যাত্মিক ও  দার্শনের বইগুলোর উপর।

আবার লিটল ম্যাগজিনগুলো নবীন প্রজন্মের জন্য জোর দিয়েছে কবিতা, ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে লিখিত বইয়ের ওপর। একপ্রকার নানা ভাবনার বইতে কলকাতা বইপাড়া কলেজ স্ট্রিটকে টেক্কা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০
ভিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।