ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির ১৪ উৎস চিহ্নিত করেছে দুদক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির ১৪ উৎস চিহ্নিত করেছে দুদক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধরীর সঙ্গে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বিনা শুল্কে আমদানি করা মালামাল বের করে নেওয়ার অনুশীলনসহ দুর্নীতির ১৪ উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। একইসঙ্গে এসব দুর্নীতি বন্ধে মনিটরিং জোরদার ও মন্ত্রণালয়ের নজরদারি বাড়ানোসহ ২৮ সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয়ে অনিয়ম, কার্যক্রম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা জানানো হয়। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধরীর হাতে এই প্রতিবেদন তুলে দেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক।

দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য জোরালো ভূমিকা নিয়ে থাকে দুদক। এটি প্রতিরোধমূলক কাজের অংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির উৎস আছে তা তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে ১৬টি মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এতে মন্ত্রণালয় ও সরকার লাভবান হয়েছে।

ড. মোজাম্মেল হক বলেন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে দুর্নীতির ১৪টি উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর প্রতিরোধে ২৮টি সুপারিশ করা হয়েছে।  

দুর্নীতির উৎসগুলো নিয়ে তিনি বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে বিনা শুল্কে আমদানি করা মালামাল বের হয়ে যায়। সব মন্ত্রণালয়ের এটি সাধারণ অভিযোগ। এছাড়া আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে লোক কাজ করে না। অযোগ্য ঠিকাদাররাও কাজ পেয়ে যায়। মন্ত্রণালয় দেখলে এটা থাকবে না।  

তিনি বলেন, বন্দর থেকে মালামাল চুরি হয়ে যায়। এছাড়া ট্রেন্ডার নিয়েও অভিযোগ আছে। নিয়োগ বদলি এবং পদায়নের ক্ষেত্রেও ঠিকমতো হয় না। নজরদারি বাড়ানো হলে এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব। আজকের এ প্রতিবেদন দুর্নীতিবাজদের জন্য এক বার্তা।

এসময় নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দুদককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা আমাদের মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া আমাদের চ্যালেঞ্জ। তাদের প্রতিবেদনকে আমরা স্বাগত জানাই।

তিনি বলেন, আমরা দুদকের প্রত্যেকটা কথাই গ্রহণ করেছি। পর্যবেক্ষণ করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। তবে দেশে গত ১১ বছরে উন্নয়ন হয়েছে। তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করছি।

দুদকের প্রতিবেদনে স্থলবন্দরের দুর্নীতির ১৪ উৎসের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানির দলিলপত্র যথাযথভাবে যাচাই না করে পণ্য ছেড়ে দেওয়া, বন্দরের শেড বা গুদাম থেকে মালামাল চুরি, প্রতিযোগিতামূলক দরের বদলে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়া, স্থলবন্দরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বদলী ও পদায়ন এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য কর্মকর্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রায় আঞ্চলিকতা, এলাকাপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করে পছন্দ অনুযায়ী ব্যক্তিকে অনৈতিক সুবিধাসহ, সেবার বিপরীতে ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অনুশীলনের কথা জানানো হয়।
 
এসব অনিয়ম বন্ধে প্রতিবেদনে ২৮ টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সুপারিশগুলো হলো, স্থলবন্দরে অটোমেশন সিস্টেম চালু করা, নিয়মিত কার্যক্রম মনিটরিং ও রিপোর্ট প্রধান, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বন্দরে নিজস্ব ইক্যুইপমেন্টের সংস্থান করা, বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক ও খালি ট্রাকের ওজন নিশ্চিত করা, সার্বিক নিরাপত্তাসহ মনিটরিং ও তদারকবর জন্য পৃথক মনিটরিং সেল গঠন। স্থলবন্দরসমুহ ট্রাফিক যানজটমুক্ত রাখা, মালামার হ্যান্ডলিংয়ে পর্যাপ্ত নজরদারির ব্যবস্থা করা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে হবে।

এছাড়া বন্দরের চোরাই চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ। দুর্নীতি বন্ধে কাস্টম ইন্টেলিজেন্স সেলের মতো আলাদা সার্ভিল্যান্স ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা, আমদানিকৃত পণ্যের পরীক্ষণের কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, শুল্ক আদায়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো, স্থলবন্দরসমুহে পর্যাপ্ত গুদামজাতের ব্যবস্থা, বেনাপোলে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য যানবাহন ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা, ফায়ার শাখায় দক্ষ জনবল বৃদ্ধি করা, স্থলবন্দরে ইপিবি ও বিএসটিআইয়ের  কর্যালয় স্থাপন করা এবং জনবল ও বাজেট পর্যাপ্ত যৌক্তিক রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০ 
জিসিজি/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।