মাগুরা: মাগুরা শহরে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) রাতে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেছে একদল যুবককে। এ সময় জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ দুই জায়গায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া দুটি আলাদা জায়গায় যুবদল ও যুবলীগের দুই কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য ছাত্রলীগের কর্মীদের দায়ী করেছেন হামলায় আহত একজনের স্বজনরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা।
পুরো ঘটনায় পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আহতদের স্বজন ও এলাকাবাসীরা।
হামলায় আহত দুইজনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন মারুফ (৩২) মাগুরা শহরের কেশবমোড় এলাকায় বদরুল আলমের ছেলে।
আহতের ভাই শাহরুখ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কেশব মোড় এলাকায় একদল মুখোশধারী যুবক তার ভাইকে কুপিয়ে জখম করে। তবে কারা কী কারণে হামলা করেছে তা তারা জানেন না।
এর আধাঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে শহরের ভায়নার মোড়ে যুবদল কর্মী খান মাহাবুবুর রহমান শান্তির (৩০) ওপর হামলা হয়। তিনি ভায়না এলাকার মিলন খানের ছেলে। গুরুতর আহত আবস্থায় মাহাবুবুর রহমান শান্তিকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তির পর রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হামলার সময় মাহাবুবুর রহমান শান্তির সঙ্গে থাকা ভায়না এলাকার অপু শেখ জানান, রাত ৮টার দিকে চা খেতে তারা তিনজন ভায়নার মোড়ে আসেন। এসময় ২০-৩০টি মোটরসাইকেলে নিয়ে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তখন শান্তিকে কুপিয়ে জখম করে চলে যায় তারা।
কারা এ হামলা চালিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে অপু শেখ বাংলানিউজকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগ, সরকারি হোসেন শহীদ ছাত্রলীগ, পৌর ছাত্রলীগ, জেলা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদধারী নেতারা উপস্থিত থেকে হামলায় নেতৃত্ব দেন। তবে কেন এ হামলা চালানো হয়েছে এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানি না।
মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষিত পাল বাংলানিউজকে বলেন, রাত পৌনে ৮টার দিকে মারুফ নামে ওই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার হাতে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তবে তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত।
অপরদিকে সাড়ে ৮টার দিকে মাহাবুবুর রহমান শান্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার মাথায়, হাতে, পায়ে ও পিঠে কোপের আঘাত রয়েছে। বিশেষ করে মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে ইসলামপুর পাড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ শহরের দুটি স্থানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাত ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দুইজায়গায়ই একাধিক বিস্ফোরিত বোমার খোসা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব কিশোর বলেন, রাত ৮টার দিকে ইসলামপুর পাড়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে একদল সন্ত্রাসী একাধিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। দরজা ভেঙে টেবিল চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় কেউ কার্যালয়ে ছিল না।
তবে কারা এ হামলা চালিয়েছে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
একই সময়ে মাগুরা শহরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিপরীতে বজলুর রহমানের বাড়ির সামনে একাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বজলুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা দুটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। তবে কে কারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারি না।
তিনি আরও জানান, এক সপ্তাহ আগে তার ভাই কোহিনূর রহমানকে কুপিয়ে জখম করে একদল সন্ত্রাসী। তিনি এখন ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেই হামলার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র আছে কি না তাও বলতে পারেননি তিনি।
এদিকে, শহরে একাধিক স্থলে এমন ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এসময় পুলিশের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ করেছেন শহরের একাধিক বাসিন্দা।
মাগুরা কাউন্সিল পাড়ার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বলেন, সন্ধ্যার পর শহরের বিভিন্ন গলিতে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে বেড়িয়েছে। এমনকি সদর থানার সামনে দিয়ে তারা দেশীয় অস্ত্র হাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে গেছে একাধিকবার। বলতে গেলে পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে। তবে তাদের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
অবশ্য যুবদলের কর্মীকে হামলা বা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন ও যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা তিনজনই ঘটনায় তাদের সংগঠনের কেউ জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মাদক সেবনের প্রতিবাদ করায় মো. মারুফ নামে ওই যুবককে কোপানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে মাহাবুবুর রহমানের ওপর কারা হামলা করেছে তা বলতে পারছি না।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন বলেন, শহরের কেশব মোড় এলাকায় একটু মারামারি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত।
কোথাও মারামারি বা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর কোথাও মারামারি হয়েছে এমন কোনো খবর পাইনি। আর বোমা বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
এনটি