রাজশাহী: আর মাত্র কয়েকদিন পরেই কৃষকের 'সোনার ডিম' খ্যাত আলু রোপণের ভরা মৌসুম চলে আসবে। তবে দেশের বাজারে এখনও আলুর দাম আকাশছোঁয়া! তাই রবি মৌসুমে অধিক লাভের আশায় আগাম আলুর চাষে মাঠে নেমে পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা।
অগ্রহায়ণের সোনালি ধানের গোলা ভরা ফসল এখন কৃষকের উঠোনে শোভা ছড়াচ্ছে। পাকা ধান ঘরে তোলার পর পরই তাই অনেকে আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করতে মাঠে নেমেছেন। আলুর বীজ রোপন করার জন্য শীত উপেক্ষা করে সকাল-সন্ধ্যা মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা। জমি তৈরি করা, হিমাগার থেকে বীজ উত্তোলন, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ এবং প্রস্ততকৃত জমিতে আলু রোপণের কাজে এখন তারা ব্যস্ত।
বর্তমানে রাজশাহীর ৯টি উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে কৃষকরা জমি চাষ, সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার অনেকেই প্রস্ততকৃত জমিতে আলুর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমি তৈরি করে ডায়মন্ড, গ্রানুলা, এ্যাস্টেরিক ও কার্ডিনাল জাতের বীজ আলু কেটে প্রস্তুত করছেন। এরপর সেই কাটা আলু রোপণ করা হচ্ছে জমিতে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধে কীটনাশকও স্প্রে করা হচ্ছে। তাই আলু চাষে এখন কৃষকদের ব্যস্ততার শেষ নেই।
চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, গত দুই বছর থেকে দাম ভালো পাওয়ায় এখন আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছেন তারা। কৃষি বিভাগ থেকে আলু চাষের প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত আলু সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করলে কৃষকরা বেশি লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আলু চাষে আরও আগ্রহী হবেন বলেও জানিয়েছেন কৃষকরা।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের মথুরা গ্রামের আলু চাষি নূরুল আমিন বলেন, এই বছর ১৫ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছেন। বাজারে এখন আলুর দাম অনেক বেশি। ফলে আমন ধান ওঠার পর তার মত অধিকাংশ কৃষকই নতুন করে জমি তৈরি করছেন এবং আলু লাগাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দিলে এবারও আলুর বাম্পার ফলন হবে।
একই উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোস্তফা জামান বলেন, বাজারে এখনও আলুর দাম আকাশ ছোঁয়া৷ বলা যায়- পেঁয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে আলুর দাম বাড়ছে। এজন্য তিনি এবার আলু চাষের মনোযোগ দিয়েছেন। ফলন ভালো হলে অধিক মুনাফার মুখ দেখা যাবে। গতবার তিনি ১২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। এবছর দাম বেশি থাকায় ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ শুরু করেছেন। তবে বীজের দাম বেশি থাকায় এবং শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় গতবারের চেয়ে এবার আলু চাষের খরচও বেড়েছে বলে জানান এ কৃষক।
এদিকে, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছরও রাজশাহী জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আলুর আবাদ হলে তা দিয়ে রাজশাহী জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা যাবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, উত্তরের এই জেলায় ডায়মন্ড, কার্ডিনাল ও এ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। ২০১৯-২০ মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। গড়ে হেক্টর প্রতি ২৬ টন করে আলু উৎপাদন হয়েছে।
মোট আলু উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৬৩ হাজার টন। আর আগের মৌসুমের গড় উৎপাদন হিসেবে চলতি বছরও এই জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত (অগ্রহায়ণ) রাজশাহী জেলায় ১৪ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আরও জমি প্রস্তুত হচ্ছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) শামসুল হক বলেন, নির্ধারিত সময়ে আলু চাষের জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে উঠান বৈঠক ও নিয়মিত সমাবেশ হচ্ছে। এর মাধ্যমে আলু চাষিদের কৃষি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় আলু চাষিরা যেন অধিক ফলন পান সেজন্য জমি প্রস্তুত, সেচ, সার ও বালাইনাশক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে একটি পূর্ণ ধারণা দেওয়া হচ্ছে। তবে ২০২০-২১ মৌসুমে বাজারে আলুর ভালো দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা এবার আলু চাষে অধিক মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।
জমির চাষবাস নিয়ে নিয়মিতভাবে উপজেলা ও থানা কৃষি কর্মকর্তা এবং ব্লক সুপারভাইজারদের সাথে পরামর্শ করছেন। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও আলুর আশানুরূপ ফলনে কৃষকের মুখেহাসি ফুটবে বলে মন্তব্য করেন- রাজশাহীর ঊর্ধ্বতন এ কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২০
এসএস/এমকেআর