ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘোড়ার গাড়িই ভরসা পদ্মার চরের মানুষের

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২০
ঘোড়ার গাড়িই ভরসা পদ্মার চরের মানুষের ঘোড়ার গাড়ি

মানিকগঞ্জ: আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগ ও কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের বাহন ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার হারিয়ে গেলেও পদ্মার চরাঞ্চলের মালামাল ও মানুষের যোগাযোগের বাহন হিসেবে এখনও ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন রয়েছে।

বর্ষার সময় যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা আর কালের পরিক্রমায় শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের মালামাল বহনের একমাত্র বাহন হলো ঘোড়ার গাড়ি।

নদীর পানি নেমে যাওয়ায় পদ্মার চরাঞ্চল এখন মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এ কারণে চরবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ঘোড়ার গাড়িযোগে বহন করে থাকে। বিকল্প হিসেবে আবার অনেকে হেঁটেই নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটান।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে চর জাগতে শুরু করে। চর জাগলেই শুকনো মৌসুমে যোগাযোগের বাহন হয়ে দাঁড়ায় ঘোড়ার গাড়ি। শুকনো মৌসুমে চরবাসী তার লালিত স্বপ্নের ফসল চাষ করতে থাকে। চরাঞ্চলে সাধারণত বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, কাউন, বোরো ধান, মিষ্টি আলু চাষ হয়ে থাকে। এসব ফসল চাষ করার জন্য চাষিরা জমি প্রস্তুত করতে শুরু করেছে, যার কারণে এখন চরাঞ্চলে যোগাযোগ খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দু’চোখ যত দূর যায় শুধু শুকনো মাঠ আর বালু। এ কারণে চরাঞ্চলের মানুষের মালামালের বাহন হিসেবে ঘোড়ার গাড়িই এখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরাঞ্চলের চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসল তোলে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্যও একমাত্র মাধ্যম হলো এ ঘোড়ার গাড়ি। অন্যদিকে তা উপজেলা সদরে বিক্রি করার জন্য নদীর ঘাটে নিয়ে আসার মাধ্যমও হলো এ ঘোড়ার গাড়ি। চরাঞ্চলে কোনো রাস্তাঘাট না থাকায় অধিকাংশ ঘোড়ার গাড়ির চালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছে এক চর থেকে অন্য চরে।

হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা চরাঞ্চলের তোফাজ্জল মিয়া (১৫) নামে এক ঘোড়ার গাড়ির চালক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ, কাম না করলে খামু কী। বাপে এক বেলা কাম করলে আরেক বেলা কাম করবার পারে না। সংসার চালানোর জন্য আমিই এখন বাপের ঘোড়ার গাড়ি চালাই। সারাদিন যে টাহা আয় করি তা দিয়া সদাই করে বাড়ি ফিরি।  

লেছরাগঞ্জ ইউনিয়নের সুজন বলেন, উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন পদ্মা চরাঞ্চলে লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ী, আজিমনগর এ তিনটি ইউনিয়ন। শুকনো মৌসুমে এ তিনটি চরাঞ্চলের মানুষের ও প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের একমাত্র মাধ্যম হলো ঘোড়ার গাড়ি। আমি প্রায় এক যুগ ধরে এ তিন চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি চালাই। তবে ঘোড়ার পেছনে যে টাকা খরচ হয় অনেক সময় তা উঠাতেও পারি না। প্রতিদিন ঘোড়ার খাওয়ার পেছনে দুইশ টাকা খরচ আর আয় হয় তিন থেকে চারশ টাকা। কিন্তু কোনো কিছু আর করতে না পারায় এখনও এ ঘোড়ার গাড়ি চালিয়েই সংসার চালাচ্ছি।  

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘোড়ার গাড়ি আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য, কালের বিবর্তনে এ ঘোড়ার গাড়ি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। আমার উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পদ্মার চরাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় তারা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শুকনো মৌসুম এলেই চরবাসীর যোগাযোগের বাহন হয়ে দাঁড়ায় এ ঘোড়ার গাড়ি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২০
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।