ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এমসির ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: ৮ আসামির বিরুদ্ধেই চার্জশিট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২০
এমসির ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: ৮ আসামির বিরুদ্ধেই চার্জশিট

সিলেট: সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ মামলার চার্জশিট দাখিল হবে বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর)। আলোচিত এ ঘটনার দুই মাস পর মামলাটির চার্জশিট দিতে যাচ্ছে মহানগরীর শাহপরান (র.) থানা পুলিশ।

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বুধবার (২ নভেম্বর) রাতে বাংলানিউজকে বলেন, চার্জশিট দাখিল ইস্যুতে বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করা হবে।

সূত্র জানায়, মামলার আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে।  

গত রোববার (২৯ নভেম্বর) ধর্ষণকারীদের ডিএনএ টেস্ট মিল থাকার রিপোর্ট আসার পর আসামিদের শনাক্ত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ। যদিও এর আগে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, আসামিদের ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর দ্রুত চার্জশিট দাখিল করা হবে। অবশেষে আলোচিত এ মামলার চার্জশিট দাখিল করবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসএমপির শাহপরান (র.) থানার (ওসি-তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

এরআগে গত ১ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর ২ দিনে এ মামলায় গ্রেফতার ৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর তা পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রথমে আদালতে এসে পৌঁছায়। পরবর্তীতে গত ২৯ নভেম্বর আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরের শাহপরান (র.) থানার ওসি তদন্ত ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের কাছে পৌঁছায়।

গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। অভিযুক্ত এসব কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।  

এ ঘটনায় ছয় জনকে আসামি করে এসএমপির শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিত ওই তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব ও জেলা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার আট জন কারাগারে রয়েছেন। গ্রেফতার সবাইকে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হলে তারা সবাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হলরুমে গত ৪ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ ঘটনায় গণশুনানি হয়। পরে কমিটির সদস্যরা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের গণধর্ষণের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সাক্ষীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে গত ১৬ অক্টোবর ১৭৬ পৃষ্টার একটি তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়েছে। যার শুনানি হয় ২০ অক্টোবর। এদিন শুনানি শেষে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এদিকে গণধর্ষণের এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কলেজের অধ্যক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দোহাই দিয়ে কলেজ কমিটির এ প্রতিবেদনটি সিলগালা করে রাখেন।
 

তাছাড়া গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেট বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান।

এর আগে ঘটনার কয়েকদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে তদন্ত করতে আসে। তদন্ত শেষে তারা তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।  

এছাড়াও গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেট বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সাথে তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বহিষ্কৃত চার জন হলেন, সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।