ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিবর্ণ হচ্ছে ডাক বিভাগের ৯২ কোটি টাকার ভবন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২০
বিবর্ণ হচ্ছে ডাক বিভাগের ৯২ কোটি টাকার ভবন নগরীর শেরেবাংলা নগরে নির্মিত ডাকভবন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নগরীর শেরেবাংলা নগরে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ডাকভবন। এটাই নতুন ডাক সদর দফতর।

ডাকবক্সের আদলে নির্মিত লাল ভবনটি সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়ে। ৯২ কোটি টাকা খরচ করে এরই মধ্যে ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অথচ বছর পেরিয়ে গেলেও উদ্বোধনের কোনো খবর নেই। রক্ষণবেক্ষণ ঠিকমতো না হওয়ায় এরই মধ্যে ভবনের ভিতরের চেহারা হতে চলেছে বিবর্ণ।
 
১৪ তলা এ ভবনে রয়েছে দু’টি বেজমেন্টসহ মিলনায়তন, সভাকক্ষ, সার্ভার, ডাক জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। ২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রায় পৌনে ১ একর জমির ওপর কাজ শুরু হয় ডাক ভবনের কাজ। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভবনটি হস্তান্তর করে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নান্দনিক ডাক ভবনের প্রধান ফটককে তালা। কলাপসিবল গেট দিয়ে দেখা যায় পানির ফোয়ারা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অযত্নে ভবনের নান্দনিক দেয়ালে জমেছে ময়লা। অনেক হাঁকডাক করে বিশাল এ ভবনে দু’জনকে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে একজন সজল চন্দ্র দাশ অন্যজন রিপন হোসেন। দৈনিক ৩শ টাকা  হাজিরায় তারা ৯২ কোটি টাকার ভবন দেখভাল করেন। সজল এর আগে  ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের বাসায় কাজ করতেন।  
 
সজল চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ডাক ভবন পাহারা দিচ্ছি। প্রায় চার বছর এখানে কাজ করি। প্রথমে খুব তোড়জোড় করে নির্মাণ কাজ হয়েছে। রাত-দিন কাজ চলেছে। অথচ প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো উদ্বোধন হচ্ছে না। আমরা মালির কাজ করি, উদ্বোধন কবে হবে বলতে পারবো না।

অথচ এর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ডাক ভবন সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর গুলিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও)। তাই জিপিও ভবনটি ভেঙে সেখানে সবুজ পার্ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

ভবনটি প্রথমে ৮ তলা নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীসময়ে তা দাঁড়ায় ১৪ তলায়। বাজেটও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯২ কোটি টাকায়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ অর্থ।

প্রকল্পের তদারকি করে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

ডাকঘর কেন উদ্বোধন হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, আইএমইডির কাজ হচ্ছে প্রকল্পের অগ্রগতি দেখা ও নির্মাণ ত্রুটি দেখা। প্রকল্পের কাজ ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে কিনা সেটা দেখভাল করা। কিন্তু ডাক ভবন উদ্বোধনের বিষয়ে আইএমইডি ভূমিকা রাখতে পারে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ডাকবক্সের আদলে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের নতুন সদর দফতর ডাক ভবন। ভবনের স্থাপত্য নকশা করেছেন স্থপতি কৌশিক বিশ্বাস। ভবনে যাতে ডাকঘরের একটা আবহ থাকে সেই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ডাকভবনের নিচতলায় বিশাল বিশাল ডাকটিকিট দেয়ালে খোদাই করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ-জাতীয় বীরদের অনেকেই আছেন সেখানে।
 
কবে নাগাদ ডাক ভবন উদ্বোধন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ডাক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখন ডাকভবন উদ্বোধনে প্রস্তুত। ডাকভবন নির্মাণ হলেও সামনের রাস্তার সমস্যা ছিল। কোভিডের কারণে আনুষঙ্গিক কাজ দেরি হয়েছে। ডাকভবনে একটি মিউজিয়াম আছে। সারাদেশ থেকে মিউজিয়ামের জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব কারণেই মূলত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও উদ্বোধনে দেরি হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
এমআইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।