ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর হামলা করার ধৃষ্টতা যারা দেখিয়েছেন, তাদের চরম মূল্য দিতে হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, উপযুক্ত প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর কে করলো? এ ধরনের ঘটনা সংবিধান ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। কারণ বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের জাতির পিতা।
বিভিন্ন ইসলামিক দেশের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তানের মতো দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে তো ভাস্কর্য নিয়ে কথা হয় না। দেবতাকে পূজা করা হয়। মানুষকে পূজা করা হয় না।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ধর্ম খুব স্পর্শকাতর। তাই আমরা হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে উস্কানিমূলক কিছু করে দেশে অস্থিতশীল অবস্থা তৈরি হোক, আমরা চাই না। রাজনৈতিকভাবে সংকটের সমাধান করতে চায় সরকার।
বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় একটি ননপলিটিক্যাল সংগঠন মামলা করেছে। এ বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নয়। তাই অরাজনৈতিক কোনো সংগঠনের মামলা করাটা ইতিবাচক।
কাউকে হুকুমের আসামি করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপযুক্ত প্রমাণ না পেলে কাউকে ভিক্টিমাইজ করা উচিত না। কেউ হুকুম দিয়েছে এমন সাক্ষ্য প্রমাণ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আমরা সরকারে আছি, ক্ষমতায় আছি। আমাদের ঠান্ডা মাথায় এগুতে হবে। কথায় কথায় মাথা গরম করলে চলবে না। বুঝে শুনে আমাদের পরিস্থিতিটা ট্যাকেল করতে হবে। কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে, এখানে আমাদের দেশে ধর্ম আবার গুরুত্বপূর্ণ ও সেনসিটিভ ইস্যু। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিষয়গুলো দেখছেন ও ট্যাকেল করছেন সেভাবে। অহেতুক দেশে অশান্তি, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা যুক্তি দিয়ে বলতে চাই।
হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সাক্ষাৎ দেবেন কি না, সেটি আমি জানি না। আলোচনার সুযোগ আছে কি না, সেটাও প্রধানমন্ত্রী দেখছেন। সব বিষয়েই সরকারপ্রধান যদি মনে করেন, তাহলে হতে পারে। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই।
মন্ত্রী বলেন, কুষ্টিয়ায় যারা এটি করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও মধুদার ভাস্কর্যের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা যারাই করবে এবং যারা এ ধৃষ্টতা দেখাবে, তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। ধোলাইপাড়ে ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ চলবে। আমরা ভাস্কর্য নির্মাণ করব। তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে, এটা তাদের বিষয়। ভাস্কর্য বিভিন্ন দেশে হয়েছে, সেখানে কেউ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেনি। হয়ত বৈধ একটি সংস্থা থেকে অনুমতি নিতে হয়, সেটা এক বিষয়। আর আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্য আমরা উদ্বোধন করিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শাপলা চত্বরে হেফাজতের ব্যানারে একটা আন্দোলন হয়েছিলে। সেটা তো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মুসলিম দেশগুলোতে মাঝে মধ্যে এ ধরনের ধর্মীয় ইস্যু চলে আসে, এর পেছনে রাজনৈতিক কারণও আছে। আমরা এগুলো অবজারভ করছি। এখন তো বাংলাদেশের সব সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ করছে। কিছু কিছু বিষয় আমাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা উচিত।
হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের ১৪ লাখ কওমি মাদ্রাসার স্টুডেন্ট আছে। তারা মেইনস্ট্রিম থেকে দূরে আছে। তাদের আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মেইনস্ট্রিমে আনার জন্য দাবিটাকে ন্যায়সম্মত মনে হয়েছে। সেজন্য তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছি। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয় যে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২০
জিসিজি/এসআই